রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ফুটওভারব্রিজ পিলারেই সীমাবদ্ধ!

আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১৩:৫১

রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মাসের পর মাস নির্মাণাধীন ফুটওভারব্রিজ কারণে দীর্ঘ হচ্ছে উত্তরাসহ এই সড়কে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ।

উত্তরা বিএনএস সেন্টার থেকে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত উড়াল সড়কের দুই পাশ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিএনএসের সামনে টঙ্গী থেকে আসা গাড়িগুলো থামে সেখান দিয়ে উত্তরার স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ রাজউক কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও উত্তরা ইউনিভার্সিটিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। এছাড়াও রাস্তার উপরের ফুটওভার ব্রিজটি পুনরায় স্থাপনের শর্তে ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মনোনীত ঠিকাদার রাস্তার দুই পাশে ৮টি করে ১৬টি ও মধ্যখানে ৪টি লোহার পিলারসহ মোট বিশটি পিলার দাঁড় করিয়ে মাসের পর মাস কাজ বন্ধ রাখে।

সরেজমিনে বিএনএস সেন্টারের সামনে রাস্তার দুইপাশে লোহার তৈরি ফুটওভার ব্রিজের বড় দুটি অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। উত্তরা মডেল টাউন মহাসড়ক বিএনএস সেন্টারের সামনে মাসের পর মাস ২০টি পিলার অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে এতো দিন পর্যন্ত এই ফুটওভারব্রিজটি ঝুলে আছে।

উত্তরা হাইস্কুল এক শিক্ষার্থীর জান্নাতুলের বাবা বলেন, সন্তানের সাথে সাথে আমরা অভিভাবকেরাও প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছি। বাচ্চাদের সাথে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত বড় বড় বাস, ট্রাক এবং বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলা অন্যান্য গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়।

উত্তরা রাজউক কর্মচারী কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স এর ব্যবসায়ী সভাপতি জয়নাল আবেদীন রতন বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে অসুস্থ রোগী, পথচারী ও বয়স্ক মানুষের কথা বিবেচনা করে সড়কে ফুটওভারব্রিজ ও ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করে সড়ক ও জনপদ এবং সিটি কপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে যাতায়াতের সুবিধার্থে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করেছেন সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। বিএনএস সেন্টারের সামনে ফুটওভার ব্রিজ তাড়াতাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ করা পথচারীদের প্রাণের দাবি।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের রাস্তা পারাপারের জন্য নিরাপদ মাধ্যম ফুটওভারব্রিজ হওয়ার কথা কিন্তু যেখানে ফুটওভারব্রিজ নেই সেখানে জীবনের ঝুঁকিতো থাকছেই। উত্তরার উত্তরখান, দক্ষিণখান, আশকোনা, কাওলা, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর ও ৬ নম্বর সেক্টরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বিমানবন্দর সড়ক রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আসা-যাওয়ার নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৩টি ফুটওভারব্রিজ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি চওড়া হওয়ার কারণে বর্তমানে আজমপুর ফুটওভারব্রিজ, রাজলক্ষী ফুটওভারব্রিজ ও জসিমউদ্দীনব্রিজ গিলে খেয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিভাবক ও অসহায় সাধারণ জনগণকে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। এ সড়কের পথচারীরা জানান, চাকরিজীবী, উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ফুটওভারব্রিজ পার হয়েই তাদের স্কুল-কলেজে যেতে হয়।

এছাড়াও বিনামূল্যে গরীব, অসহায় ও দুস্থ মানুষের একমাত্র চিকিৎসার জায়গা উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা জানান, এ রাস্তাটি পার হতে গিয়ে তারা নানা বিপত্তির সন্মুখীন হন। ব্যস্ততম বিমানবন্দর এ সড়কে বর্তমানে পথচারীদের নিরাপদে ফুটওভারব্রিজ সংলগ্ন এলাকার রাস্তা পারাপার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

এইদিকে হযরত শাহ্ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চৌরাস্তায় ফুটওভারব্রিজের দুই পাশে চলন্ত সিঁড়ি (এক্সেলেটর)। সিঁড়ি দুইটি মাসের পর মাস অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে কাচ নেই, কোথাও দেখা যায় সিঁড়ির পাঠাতন নেই, অনেক জায়গায় মনে হচ্ছে ঝড় তুফানে উড়ে গেছে চলন্ত সিঁড়ির অংশবিশেষ। পথচারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়িটি নষ্ট হয়ে থাকলেও সিটি করপোরেশন এটিকে মেরামত করার কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ সেলিম রেজা বলেন, আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফুট ওভারব্রিজের নির্মাণ শেষ করবো। এই বিষয়ে প্রজেক্ট ডিরেক্টর কে নির্দেশনা দেওয়া আছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফুট ওভারব্রিজ তৈরি কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য মুক্ত করে দেওয়ার জন্য।

তিনি আরো বলেন, এই ফুটওভারব্রিজটি হবে ১৫ দশমিক ৫০ ফিট চওড়া এবং কংক্রিটের পাটাতন। এটি হবে ঢাকা সিটির সবচেয়ে চওড়া ফুটওভারব্রিজ। তাদের ইতিপূর্বে করা অন্যান্য ফুটওভারব্রিজ ছিলো সর্বোচ্চ ১০ ফিট চওড়া ।

ইত্তেফাক/এসসি