বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

গণরুম বিলুপ্তির দাবিতে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ২১:০২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করাসহ তিন দফা দাবিতে অবস্থানরত সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়র প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (০৩ জুন) সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের খবরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এ সময় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আছেন বলেও শিক্ষার্থীদের জানান তারা। তবে উপাচার্যের সঙ্গে কথা না বলে কর্মসূচি শেষ করবেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, 'আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও হলে শিক্ষার্থীদের আসন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। ফলে গণরুম ও গেস্টরুমে শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে। নতুন হল খোলার বিষয়ে আল্টিমেটামের দু'মাস পার হলেও প্রশাসন এখনও হলগুলো চালু করতে পারেনি। এছাড়া হলগুলোতে আসন সংকট রয়েছে, তবুও অছাত্রদের হল থেকে বের করতে পারছে না প্রশাসন।'

এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফার রহমান নবীনের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অর্ণব সিদ্দিক এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৌমিক বাগচী প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এদিকে আবাসিক হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করাসহ তিনদফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সামিউল ইসলাম প্রত্যয় নামে এক শিক্ষার্থী। গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তিনি।

সামিউল ইসলাম প্রত্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের সামনের মাঠে কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে আছেন সামিউল। তার পাশে একটি প্ল্যাকার্ডে তিনটি দাবির কথা লেখা। সেগুলা হলো- হল থেকে গণরুম বিলুপ্তি করা, অছাত্রদের বের করা ও মিনি গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।

এদিক ওই শিক্ষার্থীর অবস্থান কর্মসূচির খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে সেখান যান। তারা অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীর দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দেন। তবে হল থেকে অছাত্রদের বের করার দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানান সামিউল।

সামিউল ইসলাম প্রত্যয় বলেন, ‘গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে অবস্থান করছি। গতকাল শুক্রবার উপাচার্য স্যার এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমাকে একটা আসন দেবেন, প্রয়োজনে সিঙ্গেল রুম দেবেন। কিন্তু দাবিগুলো তো আমার নিজের জন্য নয়। এছাড়া প্রশাসন থেকে আমার জন্য স্যালাইন আনা হয়েছিল। আমি বলছি, অছাত্রদের তালিকা করে একটা দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেই আমি স্যালাইন নেবো। আর দাবিগুলো পুরোপুরি মানা হলেই কেবল এখান থেকে উঠবো।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ওয়ার্ডেন ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ‘সামিউলের সাথে কয়েকবার দেখা করেছি। তার জন্য হলে আসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অন্য দাবিগুলোও মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। সেই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সময় চেয়েছি। তবে সে সময় দিতে রাজি হচ্ছে না।’

এর আগে, মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘সামিউলের দাবিগুলো যৌক্তিক, তবে বাস্তবায়ন করতে সময় প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যে গণরুম বিলুপ্তির জন্য নতুন হল চালু করেছি। বাকি নির্মাণাধীন নতুন হলগুলো চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না। এছাড়া অছাত্রদের বের করার জন্য দু’মাস আগেও নোটিশ দিয়েছি। তারা বের না হলে তো পুলিশ দিয়ে বের করা যায় না।’

ইত্তেফাক/এআই