প্রায় আট বছর আগে বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে উপলক্ষ করে যাত্রা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘গ্রিন ইকো’। ‘সবুজের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়’—স্লোগানে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে পরিবেশ রক্ষায় নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে যাচ্ছে সংগঠনটি। এবার গ্রিন ইকো নিয়ে এসেছে ‘গ্রিন পেন’। এর বিশেষত্ব হলো এটি কাগজের তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব। ফলে ব্যবহারের পর যখন কলমটি ফেলে দেওয়া হবে, তা মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। এছাড়া কলমের পেছনের অংশে থাকবে বারোমাসি গাছের বীজ, যা মাটিতে মিশে নতুন একটি গাছের জন্ম দেবে।
কুড়িগ্রামের তরুণ সঞ্জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ৫ জুন ‘গ্রিন ইকো’র পথচলা শুরু হয়। সেসময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। একাধারে শিল্পী, কবি ও পরিবেশপ্রেমী এই তরুণ পরিবেশ নিয়ে রচনা করেছেন একাধিক গান। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়তে যান, তখন সেখানে গাছের সংখ্যা খুবই কম ছিল। এর পরের কয়েক বছরে শিক্ষক ও সহপাঠীসহ সকলকে সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে সচেতনতা ছড়িয়েছেন, নিজেরাও গাছ লাগিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেরোবি ক্যাম্পাসে এখন গাছের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিশোর-তরুণরা ‘গ্রিন ইকো’-তে যোগ দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, নাগেশ্বরী কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ ও কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। মূলত পরিবেশবাদী আন্দোলনের অংশীদার হয়ে এগিয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য।
করোনার সময়ে যখন লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষ, তখন প্রকৃতি নিজেকে নতুন করে ফিরে পেতে শুরু করে। মানুষের কোলাহল না থাকায় পাখির কলতানে মুখর হয় প্রকৃতি। ‘গ্রিন ইকো’র সদস্যরা সেই সময়টায় ‘পাখি রক্ষা কর্মসূচি’ হাতে নেন। ৩০ জন সদস্য নিজেদের বাড়ির আঙিনা বা বারান্দার দেয়ালে ১৫০টি মাটির পট স্থাপন করেন। এর প্রায় অর্ধেকে বাসা বাঁধতে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
‘গ্রিন ইকো’র সদস্যরা জানান, দেশের প্রান্তিক এলাকা থেকে শুরু করে শহরের বাড়ির বারান্দায়ও এভাবে পাখির নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
মুজিববর্ষে সারা দেশে এক হাজার গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নেয় ‘গ্রিন ইকো’। সেই কর্মসূচি প্রায় সফল হয়েছে। এবার তাদের লক্ষ্য এক লাখ গাছের চারা রোপণ করা। এর পাশাপাশি বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে সামাজিক-সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছেন তারা। বিশ্ব নদী দিবসে নদীর রক্ষা বিষয়ক আলোচনা, পরিবেশ দিবস ছাড়াও সুন্দরবন দিবসে সুন্দরবনের গুরুত্ব তুলে ধরাসহ পরিবেশ-বিষয়ক বিভিন্ন কাজে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
‘গ্রিন ইকো’র পরিচালক সঞ্জয় চৌধুরী জানান, এবার আমরা কাগজ ব্যবহার করে যে গ্রিন পেন তৈরি করেছি, সেখানে অন্যান্য কলমের তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতি ১ হাজার কলম বিক্রির লভ্যাংশ থেকে ১০টি গাছের চারা কিনে রোপণ করা হবে। এছাড়া কলমের পেছনের অংশে মরিচ, টমেটো, বেগুন বা ওষুধি তুলসী, বা জারুল গাছের বীজ সংযোজন করা হচ্ছে। এই কলম ব্যবহারের পর মাটিতে বা টবে কলমের পেছনের দিকটা পুঁতে দিলেই গাছ হবে। যত্রতত্র ফেলে দিলেও কলমটি পঁচে গিয়ে গাছ হওয়ার সুযোগ থাকবে। ১০০টি কলম মাত্র ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে চাইছি। এই কলম যখন কোনো শিশু ব্যবহার করবে, সে পরিবেশের প্রতি যত্নবান হয়ে বেড়ে উঠবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, সকলে মিলে দূষণমুক্ত সবুজ-সুন্দর পৃথিবী গড়ার।