ভারত থেকে নেমে আসা পানির কারণে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ও কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারতের ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির কারণে উজানের পানির ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ রংপুর বিভাগের সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয় প্রবাহিত হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে ওই সময় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, চিলমারী পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার নিচে, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমারে এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপরে, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ঘাঘট নদী গাইবান্ধা পয়েন্টে বিপৎসীমার এক দশমিক চার মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, মিনার বাজার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চর, মটুকপুর, চিলাখাল, লহ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রামওঝা, গজঘন্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ, চর ছালাপাক, মর্ণেয়া ইউনিয়নের নরসিংহ, চর মর্ণেয়া, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণ শর্মা, আজমখাঁ, হয়বত খাঁ, বিশ্বনাথের চর, চরগনাই, ঢুষমারা, চর রাজিব, গোপিঙ্গা, গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, তালুক শাহবাজপুর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া, শিবদেব, রামসিং, জুয়ান, হাগুরিয়া হাশিম এলাকায় মানুষের পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, ইচলী, গজঘন্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল চর ও দ্বীপচরে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও গলা সমান, কোথাও কোমড়, কোথাও বা হাঁটু পানি হয়েছে। বন্যার কারণে কৃষকদের পাট, মরিচ, বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় স্থানীয়রা কলা গাছের ভেলা ও ডিঙ্গি নৌকায় যাতায়াত করছেন।
কাউনিয়ার চর হায়বৎখাঁর কৃষক নুরু মিয়া বলেন, আমরা এখন বন্যার পানির মাঝে গরু-ছাগল নিয়ে আটকা পড়ে আছি। শুনতেছি পানি নাকি আরও বাড়বে। পানি আরও বাড়লে আর বাড়িতে থাকা যাবে না।
গঙ্গাচড়া লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমার ইউনিয়নে ১৫’শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিস্তার তীব্র স্রোতে ২০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পবিবার বাঁধে ওপর আশ্রয় নিয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, লহ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট আশ্রয়ণ, চর শংকরদহ ও ইচলী এলাকার পানিবন্দী মানুষদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চাহিদা মত অন্য এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছানো হবে। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার স্থায়ীত্ব বেশি হলে মানুষদের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বোটের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি মধ্যরাত নাগাদ আরও বাড়তে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমবে। বৃষ্টির কারণে এ দুই নদীর পানি বাড়তে পারে।