ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরে স্টেশনের অদূরে অবস্থিত সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটির এখন বেহাল দশা। তীব্র জনবলসংকটে ভুগছে হাসপাতালটি। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটিতে কোনো চিকিৎসক ও অন্য পদে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে। এক জন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের চিকিৎসাসেবা, দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে দ্রুত গিয়ে আহত রোগীর সেবা প্রদান, বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীদের খোঁজখবর রাখা, রেলওয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের পথ্য ও খাদ্য সরবরাহ করা এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য সর্বক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি প্রস্তুত রাখার জন্য রেলওয়ে হাসপাতাল তৈরি করা হয়।
বর্তমানে সান্তাহার জংশন স্টেশনের প্ল্যাটফরম উঁচু, দৃষ্টিনন্দন যাত্রী ছাউনি, বিদ্যুত্ সরবরাহসহ অধিকতর নিরাপত্তাবেষ্টনী ওয়াল নির্মাণ এবং ট্রেনগুলোতে যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন করা হলেও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় নাই। সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক নেই, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স নেই, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নেই, পরীক্ষাগার নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই, উন্নত ওষুধ নেই, ইনডোর সেবা নেই। হাসপাতালটির মঞ্জুরিকৃত ২৭ জন জনবলের স্থানে আছে মাত্র আট জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কাগজে কলমে ২২ শয্যা মঞ্জুরি থাকার কথা থাকলে বর্তমানে আছে ১৩ শয্যা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইনডোরে কোনো চিকিৎসাসেবা না থাকায় রোগী ভর্তি হয় না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দুই জন চিকিৎসকের বিপরীতে একজনও কর্মরত নেই। চিকিৎসকের অনুপস্থিতে একজন ফার্মাসিস্ট শুধু রোগীর বিবরণী শুনে ওষুধ দেয়। ইনডোর সিস্টার ইনচার্জ এক জন, কম্পিউটার অপারটের পদে এক জন, এক জন ড্রেসারার, এক জন বাবুর্চি ও এক জন মেডিসিন ক্যারিয়ার কর্মরত আছেন।
হাসপাতালটিতে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও জামাদার পদে নেই কোনো জনবল। দুই জন খালাসির স্থলে আছেন এক জন ও ৪৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্থলে ৩১ জন কর্মরত আছেন। সত্তরের দশকে হাসপাতালটিতে একটি উন্নত পরীক্ষাগার থাকলেও বর্তমানে তা নেই। রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা পরিদর্শনেও আসেন না।
হাসপাতালটির ড্রেসারার আব্দুল মান্নান জানান, ডাক্তার না থাকার কারণে কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। তবে এক জন ফার্মাসিস্টের অধীনে আউডডোরে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী দেখভাল করা এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করা হয়। হাসপাতালের মূল ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো খুবই নাজুক। কয়েকটি আবাসিক কোয়ার্টার পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে আউটডোরে কোনো রোগীর দেখা মেলেনি। রেলের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পোষ্যরা হাসপাতালমুখী হচ্ছে না। নানা রকম সংকট নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমও) ডা. শাকিল আহমেদ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, অন্যান্য জনবল নিয়োগসহ নানা বিষয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ নানা হাসপাতালে প্রচুর জনবলসংকট আছে। এর মধ্যে ২ হাজার জনবল রিক্রুটমেন্টের প্রক্রিয়া চলমান আছে। অন্য জনবলসংকটের চেষ্টা চলছে।