সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইজিবাইক-অটোরিকশা চার্জে খরচে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ,আবাসিক গ্রাহকদের দুর্ভোগ

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৬:০১

মানিকগঞ্জের ঘিওরের অলিগলি থেকে শুরু করে সাত ইউনিয়নের সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ইজিবাইক। তিন হাজারের বেশি এসব যানবাহনের ব্যাটারি চার্জের অধিকাংশ গ্যারেজে রয়েছে বিদ্যুতের বৈধ সংযোগ। এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য জামানত নিয়ে বসানো হচ্ছে ট্রান্সফরমার। আছে অবৈধ সংযোগও। আবাসিকের সংযোগে চলছে চার্জের বাণিজ্যিক কাজ।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন এবং ঘনবসতি ঘিওর উপজেলার মধ্য দিয়ে গেছে মানিকগঞ্জ-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক। এছাড়া এ অঞ্চলে নানা কল কারখানা ও কার্যালয় রয়েছে। ফলে দিন দিন ব্যস্ততা বেড়েছে। যে কারণে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যাও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যানবাহনের সংখ্যা উপজেলায় প্রয়োজনের চেয়েও বেশি হয়ে পড়েছে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে। তাদের ভাষায়, উপজেলায় দৈনিক বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, তার অর্ধেকই চলে যায় এসব যানবাহনের চার্জে। ফলে অন্য গ্রাহকদের নানাভাবে ভুগতে হয়। উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সব মিলিয়ে উপজেলায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অটোভ্যানের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। তবে কোনো ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবরা জানান, ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহনের নিবন্ধন না থাকায় তাদের কাছে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।

ঘিওর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় জানায়, একটি ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, রিকশায় পাঁচটি করে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। ১২ ভোল্টের পাঁচ ব্যাটারির ধারণক্ষমতা ২ কিলোওয়াট। দিনে ৫ ব্যাটারির একটি ইজিবাইক আট ঘণ্টা চার্জ দিলে ১৪ থেকে ১৫ ইউনিট বিদ্যুত খরচ হয়। সেই হিসাবে তিন হাজার যানবাহনে দিনে বিদ্যুত ব্যবহৃত হচ্ছে ৪৫ হাজার ইউনিট (প্রায় পাঁচ মেগাওয়াট)। অথচ উপজেলায় বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এক জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ইঞ্জিনচালিত নয় বলে এসব যানকে সড়কে চলাচলের নিবন্ধন দেওয়া হয় না। কিন্তু বিদ্যুত বিভাগ এসব যানবাহনে চার্জ দেওয়ার জন্য আলাদা ট্যারিফ নির্ধারণ করে সংযোগ দিচ্ছে। দিনে সমস্যা কম হলেও রাতে এসব যানবাহন চার্জে বসান মালিক ও চালকরা। তখনই অন্য গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যায় না।

ঘিওর অটোরিকশা ও ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি মানিক খানের দাবি, সড়কে গাড়ি বেশি হওয়ায় আয় কমে গেছে। বেশির ভাগ লোকই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ১ থেকে ২ লক্ষাধিক টাকায় এসব যানবাহন কেনেন।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক পলাশ মিয়া বলেন, উপজেলায় তিন হাজারের ওপর ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও অটোভ্যান চলাচল করে থাকে। সব গাড়ি সমিতির অন্তর্ভুক্ত না। ৮ ঘণ্টা ইজিবাইকের পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি চার্জ দিলে বিদ্যুত খরচ হয় মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। ঋণের কিস্তি ও বিদ্যুৎ বিল দিয়ে খুব অল্প টাকাই হাতে থাকে চালকদের।

ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত যানের কারণে প্রচুর বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত, বিষয়টির সমাধানে উদ্যোগী হওয়া।

ঘিওর সদর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, এসব যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া উচিত। তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় আসবে।

পল্লী বিদ্যুত সমিতির ঘিওর জোনাল কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী লিপিয়া খাতুন বলেন, ঘিওরে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩২ হাজার ১৪৭ জন। এসব গ্রাহকের মিটারে এক থেকে দুই কিলোওয়াট ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। উপজেলায় ৩০টি বৈধ চার্জিং স্থান রয়েছে। অবৈধভাবে বিদ্যুত ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/আরএজে