গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের মুন্সীরহাট গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনের মুখে পড়েছে মুন্সীরহাট বাজার ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো এসব পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচে।
এছাড়া গত এক মাসে একই উপজেলার কচুয়া, ভরতখালী, সাঘাটা, মুক্তিনগর, ঘুড়িদহ, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়ন ও ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ী, উড়িয়া, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়ন এবং গাইবন্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর ও ঘাগেয়া ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘর বাড়িসহ শত শত বিঘা আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
অন্যদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কারেন্টের বাজার, চরমাদিরী পাড়া, কানু চড়িয়াবাড়ী, পাড়া সাধুয়া, মাদারীপাড়া, বোচগাড়ি, পাঁচপীর, খেয়াঘাট, খোর্দ্দলাঠশালা, কাশিমবাজার গ্রামেও ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
মুন্সীরহাট এলাকার জয়নাল মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন বেড়েই চলছে। নদী ভাঙনের কারণে নদের তীরবর্তী এলাকার বসত ভিটা, আবাদি জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পরা মুন্সীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বপরিবারে আশ্রয় নেওয়া শিউলি বেগম বলেন, গত ৬ দিন হলো ভিটেমাটি হারিয়ে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। পরিবার নিয়ে এখন কোথায় থাকব সেই চিন্তায় দিন পার করছি।
একই গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রত্যেক বছর পানি বৃদ্ধির সময় সরকারি (পানি উন্নয়ন বোর্ড) লোকেরা নদীর পাড় দিয়ে কয়েক বস্তা বালু ফেলে মোনাজাত করে ওই যে চলে যায় আর আসে না। নদীর স্রোতে সেই বালুর বস্তা আর কতক্ষণ টিকে থাকে।
একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ভিটেমাটি হারিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের মতো দরিদ্র মানুষদের। তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো ত্রাণ চাই না। নদী ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।
সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইট বলেন, এ ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এসব পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা প্রশাসনের নিকট পাঠানো হয়েছে।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মজিবর রহমান বলেন, গাইবান্ধার যেসব পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরিভিত্তিতে সেসব স্থানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, মুন্সীরহাট বাজার এলাকার ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ চলমান রাখা হয়েছে।