সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল

৫০ শয্যার জনবলে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল

আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:২৯

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালকে ২০ বছর আগে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত হাসপাতালের জনবল সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার জনবলও নেই। অন্যদিকে হাসপাতালে রয়েছে শয্যা ও কক্ষের সংকট। ফলে রোগীদের মেঝেতে-করিডোরে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলা শহরে প্রাণকেন্দ্রে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালটির অবস্থান। ২০০৩ সালে হাসপাতালকে ৫০ শয্যার থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তখন হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু হাসপাতালের জনবল কাঠামোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। সেই ৫০ শয্যার জনবল কাঠামোতেই চলছে ১০০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। ৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে সংকট। ৫০ শয্যার জন্য ৫২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩৫ জন। শূন্য রয়েছে ১৭ জন চিকিৎসকের পদ। যার অধিকাংশই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ৭৬ জন নার্সের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭১ জন। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের পদ ৯৯ জনের। সেখানে ৩৬ পদ শূন্য রয়েছে। কর্মরত আছেন ৬৩ জন।

জানা যায়, প্রতিদিন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৯০০-১০০০ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। আর ১০০ শয্যা থাকলেও প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকেন ৩২০-৩৫০ জন। শয্যার তিন গুন রোগী থাকার কারণে তাদের মেঝেতে, করিডোরে, করিডোরের মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিছানা, খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। কারণ হাসপাতালে ১০০ রোগীর জন্য সব সুযোগ সুবিধা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১০০ রোগীর বেশি ভর্তি থাকলে তাদের নিজ দায়িত্বে খাবার, বিছানাসহ অন্যান্য সেবা বাইরে থেকে গ্রহণ করতে হয়।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল রবিবার ৩২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যারা শয্যা পাননি, তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে, ওয়ার্ড, সিঁড়ি ও ভবনের করিডোরে রাখা হয়েছে। অনেক ডেঙ্গু রোগী ও শিশু রোগীদেরও মেঝেতে রাখা হয়েছে। কথা হয় সদর উপজেলার কাগদী এলাকার কল্পনা আক্তারের সঙ্গে। তার ১০ বছর বয়সী ছেলে বায়েজিদ বোস্তাকিনকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে কোনো শয্যা দেওয়া যায়নি। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির করিডোরের মেঝেতে তাকে রাখা হয়েছে। কল্পনা আক্তার বলেন, ‘ছেলের জ্বর কমছে না। এর মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে মেঝেতে আছি। এখানে ফ্যানের ব্যবস্থা নেই, পোকামাকড়, মশা-মাছির উপদ্রবে ছেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে ভর্তি রোগীদের দেখতে হয়। সেখানে অন্তত দুই ঘণ্টা ব্যয় হয়। তারপর বহির্বিভাগে আসা রোগীদের দেখা শুরু করি। হাতে যে সময় থাকে, তাতে ২৫-৩০ জন রোগী দেখা সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন ২০০-২৫০ জন রোগী দেখতে হচ্ছে। এতে রোগীদেরও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া যায় না। আমরাও শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০ বছর আগে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়নি। ফলে কমসংখ্যক জনবল দিয়েই প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ মিলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, ১০০ শয্যার জনবল অনুমোদন ও পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

ইত্তেফাক/এমএএম