ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য নিয়ে যেকোনো কাজে লেগে থাকলেই মানুষ সফল হয়। নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার ছেলে ইমরান হোসেন অনয়ের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। ইমরানের বাবা ইসলামপুরের একজন ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। তাদের ইচ্ছা ছিল একমাত্র সন্তান হবে আর্মি অফিসার। বাবা-মায়ের ইচ্ছাপূরণে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও একসময় ইমরানকে পেয়ে বসে প্রযুক্তির নেশা। সিদ্ধান্ত নেন প্রযুক্তিভিত্তিক ক্যারিয়ার গড়বেন।
২০১৬ সালে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রথম ল্যাপটপ হাতে পান ইমরান। তারপর থেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের ভূত চেপে বসে মাথায়। তখন থেকেই টেকভিত্তিক বিভিন্ন প্রোডাক্টের ডিজাইন নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু। ইউটিউব ও গুগলের বিভিন্ন লার্নিং ওয়েবসাইট থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে শুরু করেন।
এরপর ২০১৭ সালে UI/UX Design-এর কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে ১৬ বছর বয়সে ‘দ্য ঢাকা ডিজিটাল’ নামের একটি কোম্পানিতে ফুলটাইম UI/UX Designer হিসেবে কাজ শুরু করেন, তবে তখন বেতন ছিল মাসে মাত্র ৮ হাজার টাকা। তবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আলাদা করে কাজ খুঁজতে শুরু করেন তিনি।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে ইমরান চাকরি ছেড়ে পুরোদমে নিজের প্রোফাইলে কাজ শুরু করেন। প্রথম প্রজেক্টেই আয় হয় ৩০০ ডলার। এরপর অনলাইনে Dribbble, Behance, Linkedin-এর প্রোফাইল থেকে আসতে শুরু করেন ক্লায়েন্ট। ব্যস্ততাও বাড়তে থাকে তার। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি বিদেশের কয়েকটি কোম্পানিতে 'রিমোট' জবের জন্য চেষ্টা শুরু করেন ইমরান। ২০২০ সালে ইমরান জাপানের একটি এডটেক কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পান। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে অস্ট্রেলিয়ান জনপ্রিয় ডিজাইন অ্যাজেন্সি ‘Vool.Studio’-তে কাজ শুরু করেন সিনিয়র প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসেবে। ২০২২ সাল যেন ইমরানকে নিয়ে গেছে এক অন্য মাত্রায়। AI প্রযুক্তি নির্ভর ইংলিশ লার্নিং প্লাটফর্ম ‘Elsa Speak’-এর প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরুর পাশাপাশি গড়ে তুলেন নিজের একটি টিম।
এখন নিজে আয় করার পাশাপাশি তরুণদের বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইমরান। তিনি মনে করেন, দেশের চাকরির বাজারে ঘুরে হতাশ না হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাই তিনি ছোট পরিসরে নিজেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তরুণদের। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কয়েকজনকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখিয়ে তাদের দিয়ে কাজও করাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বাকিসময়টা কাজে ব্যয় করছেন।
যারা ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান তাদের উদ্দেশ্যে ইমরান বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে মূলত বিদেশি কোম্পানি ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ইংরেজি দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে ধৈর্যশীল হতে হবে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে এবং ভাষাগত দিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’