সুন্দর একটি বাংলাদেশ - যেখানে সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত থাকবে, থাকবে না কোন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও পথশিশু। আর এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কখনও শিশুদের দায়িত্ব, কখনও দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের পাশে, আবার কখনও করোনায় প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান। তাই মাস্তুল ফাউন্ডেশন এখন সমাজের কাছে একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত যার মূল লক্ষ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা।
যেভাবে শুরু :
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একবার রবীন্দ্র সরোবরে গান গাওয়ার সময় পরিচয় হয় অসংখ্য পথশিশুর সঙ্গে। আবদার ছিল কিছু বই ও রংপেন্সিল দেওয়ার। বাসা থেকে পাঁচ-ছয়জনের জন্য সে আবদার পূরণ করতে গিয়েই দেখেন অপেক্ষমাণ প্রায় ৪০ জন। পথশিশুদের আগ্রহ আর উপেক্ষা করতে পারলেন না কাজী রিয়াজ রহমান। সাতপাঁচ না ভেবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তৈরি করে বসলেন পথশিশুদের জন্য একটি ছোট স্কুল। ১৯ শে অক্টোবর ২০১২ সালে কাজী রিয়াজ রহমানের জন্মদিনেই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় মাস্তুল ফাউন্ডেশনের পদযাত্রা।
বর্তমানে মাস্তুলে রয়েছে নিজস্ব স্কুল, মাদ্রাসা এবং শেল্টারহোম যেখানে আবাসিক/অনাবাসিক মিলে শতাধিক পিতামাতাহীন/ অনাথ/ এয়াতিম শিক্ষার্থী রয়েছে। এর বাহিরে কয়েক জেলায় প্রজেক্ট স্কুলগুলোতে হাজারের অধিক সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সকল শিক্ষার উপকরন দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার, শিশু অধিকার, মৌলিক চাহিদা নিশ্চয়তা করা হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে তোলা হচ্ছে। এর বাহিরে যাকাত স্বাবলম্বী প্রজেক্টের মাধ্যমে ৮০০ জনকে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে। আছে দাফন-কাফন সেবা প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০০ এর অধিক লাশ দাফন হয়েছে। এছাড়াও দুস্থ অসহায় রোগীদের জন্য ফ্রী এ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতায় কাজ করছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন। রয়েছে মাস্তুল মেহমানখানা, যেখান থেকে শতাধিক অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের একবেলা পেট পুড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা।
প্রতিবন্ধকতা:
কাজী রিয়াজ রহমানের বলেন, সকল কাজ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তার সৃষ্টির সেবায় আমরা নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে কাজ করে যাবো। জাতি, ধর্ম, বর্ন, নির্বিশেষে দেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কল্যান সাধনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন। অবশ্যই কাজ করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা আসবে। প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কোন বৃহৎ উদ্দেশ্য সফল হয় না। শুরুতে পরিবারের অনুদান দিয়ে শুরু করলেও একসময় আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। এমনকি অফিসের ভাড়া বাকি থাকায় বাড়ির মালিক অফিস ছেড়ে দিতে বলেন। অনুদানের আশায় ঘুরেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে। শুধু তাই নয় করোনার শুরুতে অনুদান শূন্যতে নেমে এসেছিল। তখন ভেবেছিলাম এই বুঝি সব শেষ! কিন্তু না মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে করোনাকালীন সময়ে আমরা হাজারো মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, নিজ হাতে করোনার মৃত ব্যক্তিদের গোসল ও দাফনসেবা দিয়েছি। কাজ করেছি মহান সৃষ্টিকর্তার আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দেশের মানুষকে ভালবেসে আর তার দৃষ্টান্ত ২০২০ সালের জয় বাংলা ইয়ুথ এওয়ার্ড এর বিজয়ী মাস্তুল ফাউন্ডেশন।
আগামী পথচলা:
আগামী পথচলায় মাস্তুল ফাউন্ডেশন দেশের জন্য কি কি ভূমিকা রাখবে? এর উত্তরে কাজী রিয়াজ রহমান বলেন সবকিছু মহান আল্লাহর ইচ্ছা, আমরা শুধুমাত্র কাজ করে যেতে পারি। আমাদের ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) লক্ষ্যগুলির সাথে যুক্ত হয়ে দেশের দারিদ্র্য নির্মূল; ক্ষুধামুক্তি; সুস্বাস্থ্য; মানসম্পন্ন শিক্ষা; লিঙ্গ সমতা; বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন; বৈষম্য হ্রাস; এবং নারী ক্ষমতায়নে কাজ করা যাতে ২০৬২ সালে মাস্তুলের ৫০ বছর পূর্তিতে দেশের জিডিপিতে ০.৫% ভূমিকা রাখতে পারি।