নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের কেল্লাবাড়ি থেকে বাহাগিলি ইউনিয়নের নওদার বাজার পর্যন্ত ৭ পয়েন্ট ২শ ৬ মিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ দীর্ঘ তিন বছরেও শেষ হয়নি। সড়কটি দুইপাশে খুঁড়ে রাখার কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কটি দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
তবে সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, সঠিক সময়ে সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে টেন্ডারে কাজটি পাওয়ার পর সড়ক নির্মাণ কাজের উপকরণসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার কারণে ঠিকাদার কৌশলে কাজ বন্ধ রেখে চলে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে নতুন করে টেন্ডার আহবান করলে সরকারি অর্থের দ্বিগুণ অপচয় ঘটবে।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের কেল্লাবাড়ি থেকে বাহাগিলি ইউনিয়নের নওদার বাজার পর্যন্ত ৭ পয়েন্ট ২শ ৬ মিটার দৈঘ্যের সড়কটি ১০ ফিট প্রস্থ থেকে এজিংসহ ১৪ ফিটে সম্প্রসারণ করার জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। টেন্ডারে কাজটি পান নীলফামারীর ঠিকাদারি প্রতিষ্টান শাহ আনোয়ার এন্টার প্রাইজ।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেল্লাবাড়ি থেকে নওদার বাজার পর্যন্ত সড়কটির দুইধারে খুরে রাখা হয়েছে। চলতি বর্ষায় গোটা সড়কটির হাজার হাজার স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কটির মাঝখানের কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পথচারীরা অনেক কষ্টে চলাচল করছেন।
পথচারী নিতাই ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, এই সড়কটি দিয়ে বাহাগিলি ও নিতাই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা শহরের সবচেয়ে বড় হাটবাজার তারাগঞ্জ হাটে যাতায়াত করে। প্রতি সোমবার ও শুক্রবার তারাগঞ্জ হাটে ওই দুই ইউনিয়নের মানুষ কৃষি পণ্যসহ গরু বাছুর বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। বর্তমানে সড়কটি খুঁড়ে রাখায় বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্য পরিবহন করছে কৃষকরা।
অটোচালক আশিকুর রহমান বলেন, সড়কটি খুঁড়ে রাখার দুই থেকে তিন বছর হয়ে গেল। বর্তমানে অসুস্থ যাত্রীদের নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়েছে। সড়কটি দিয়ে নওদার বাজার ও কাচারীবাজার থেকে যেখানে তারাগঞ্জ যেতে ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগতো বর্তমানে সড়কের বেহাল দশার কারণে এক থেকে দেড়ঘণ্টা সময় লাগছে।
বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাউদ্দোলা লিপটন বলেন, ওই সড়কটি বাহাগিলি ও নিতাই ইউনিয়নবাসীর তারাগঞ্জ, সৈয়দপুর ও রংপুর যাওয়ার একমাত্র সড়ক। সড়কটি অবস্থা এতই বেহাল যে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কটি সংস্কার করা অতিব জরুরি।
সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের মালিক শাহ আনোয়ারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী মাহামুদুল হাসান বলেন, সড়কটির দুই দিকে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ না করায় ওই ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবান করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নতুন করে টেন্ডার আহবান করলে সরকারের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে চিঠি লিখব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকীর কাছে সড়কটির নির্মাণ কাজ ও রিটেন্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।