সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘সরকার বার বার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে’

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:১৭

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু বিএনপি নয় দেশের সবগুলো রাজনৈতিক জোট ঘোষণা দিয়েছে যে, এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। এই সরকার বার বার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি সেখানে অংশ নেবে এবং নির্বাচনের পরে আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। 

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে রংপুর যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে রোডমার্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

ফখরুল বলেন, এক দফা মেনে নিন, শান্তিপূর্ণ পন্থা না মানলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গে বর্তমান সরকার ভেসে যাবে। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিএনপির এক দফা দাবিতে আদায়ে মাঠে নেমেছে। যদি সরকার শান্তিপূর্ণভাবে এ দাবি মেনে নেন তাহলে ভালো। এ দাবি না মানলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উত্তাল তরঙ্গ তৈরি হবে। আর সেই তরঙ্গে সরকার ভেসে যাবে। জনগণের সরকার গঠিত হবে।তাই আমরা শপথ নিয়েছে এ সরকারের পতন ছাড়া ঘরে ফিরে যাবো না। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, যে সরকারের আমলে পরপর দুটো নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়ে যায়, চুরি হয়ে যায়, জনগণ ভোট দিতে পারে না; সেই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন করা যায় না। সে জন্য শুধু বিএনপি নয়, সারা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এই সরকার বারবার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দিতে পারেনি। অথচ আমাদের দেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো গণতন্ত্রের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিচালনা করার জন্য। 

লুটেরা, অনির্বাচিত এবং ফ্যাসিবাদী এ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজকের এ তারুণ্যের রোডমার্চ এ কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রংপুরের বিরাট ঐতিহ্য আছে। এখানে ঐতিহ্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নুখে দাঁড়ানোর ঐতিহ্য। রংপুর থেকে আজকের তরুণরা দেশের জনগণকে ডাক দিচ্ছে এ দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার কৌশল করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে, গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাতে চায় তারা। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ, বিদ্যুৎ থাকছে না, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সেচ ও কৃষিকাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। ব্যাংক খালি করে দিয়েছে রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি করছে তারা। সবখানে চুরির কারণে রিজার্ভ কমে আসছে অর্থনীতির চাকা চলছে না।

মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থ্যতা উল্লেখ করে, গতকাল রাতে আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই সরকারের কাছে তার (খালেদা জিয়ার) পরিবার ও চিকিৎসকরা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বারবার বলেছে। কিন্তু সরকার এসব কথা শুনছেন না। অথচ বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী যখন বন্দী ছিলেন, তখন তিনি কানের অসুখের কথা বলে আমেরিকা গিয়েছিলেন। আর আজ তিনিই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না।

রংপুরের মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বিখ্যাত নুরলদীনের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল এই রংপুর থেকেই। আবার সেই রংপুর থেকেই তরুণরা আপনাদের সকলকে ডাক দিয়েছে, এই ভয়াবহ, একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, লুটেরা সরকারের বিরুদ্ধে থেকে দাঁড়ানোর জন্য। বাংলাদেশের মানুষ আজকে অসহায় হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চাল, ডাল, তেলের দাম ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে অনেক। তবু মানুষ ঠিকমতো বিদ্যুৎ পায় না। লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকরা সেচ দিতে পারে না। আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যাংকগুলোতে দুর্নীতি করে সব টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এই সরকার নিজেরা দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে, ফলে আজ দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন নির্দলীয়- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নেবে। অন্যথায় এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না।

রংপুর থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতারা। এরপর বিএনপি কার্যালয় থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে বিশাল রোড মার্চ নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দিনাজপুরের দিকে রওনা হয়। 

ইত্তেফাক/পিও