বাকি না দেওয়ায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে দোকানদারকে মাধররের অভিযোগ উঠেছে। ঐ ছাত্রলীগ নেতার নাম মাসুদ রানা সরকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর অনুসারী।
ভুক্তভোগী দোকানদারদের নাম আবু বকর (৩৫) ও আরিফুর রহমান (৩০)। এরমধ্যে আবু বকর পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তারা দুইজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফরিদা টাওয়ারের নিচে স্টার ক্যাফের মালিক। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী দোকানদার আবু বকর বলেন, বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র দোকানে এসে বার্গার আর পাস্তা কেনেন। টাকা চাইলে ঐ ছাত্র বলেন সন্ধ্যার সময় মাসুদ ভাই এসে টাকা দিয়ে যাবে। আমি বলি দোকানে আমরা এখন বাকি দেই না, মাসুদ ভাইয়ের নামে অনেক টাকা এমনিতে বাকি আছে। পরে ঐ ছাত্র বার্গার আর পাস্তা রেখে চলে যান। বিকেল পাঁচটার দিকে ৫-৬ জন ছাত্র দোকানে এসে খাবারের অর্ডার দেয় এবং তারা ৩১০ টাকা বিল করেন। টাকা চাইলের তারা বলেন, মাসুদ ভাই টাকা দিয়ে যাবেন। ঐ সময় আরিফ তাদের কাছে টাকা চাইলে তার সাথে ছাত্রদের কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা আরিফের গায়ে হাত তোলে। আমি দোকানের একটি শার্টার বন্ধ করে দেই। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুদ রানা সরকার সহ ১০-১৫ জন ছাত্র হাতে করে লাঠি, বাঁশ, রড নিয়ে এসে দোকানে থাকা আমাকে, আরিফকে এবং আমার ছোট ভাই জাকারিয়াকে (১৭) মারধর করেন। এ সময় তারা আমার দোকানের শার্টার পেটান এবং দোকানে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন।
আরেক ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন পরপরই ছাত্ররা এসে মাসুদের নামে বাকি নিয়ে চলে। কিন্তু মাসুদ কখনো আসেন না দোকানে। ব্যবসা চালানোর জন্য আমাদের এখানে বাকি দিতে হয়। তার নামে ১২০০ টাকার মত বাকি আছে। তাই আজকে আমরা বাকি দিতে চাইনি। আর বাকি না দেওয়াটাই আমাদের অপরাধ হয়েছে। আমাকে ধরে মাসুদের ছেলেরা মারধর করেছে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন আছে। আবু বকর ভাইয়ের মাথায় আঘাত করা হয়েছে।
তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা সরকার ঘটনাটির সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। তার দাবি তার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি রুমে ছিলাম। বিকেলে আমি শুনেছি ঐ দোকানে আমাদের ক্যাম্পাসের কয়েকজন ছাত্র বার্গার খায়, এরপর ওদের পেটে সমস্যা হয়। বিষয়টা তারা দোকানদারকে বলতে গেলে ঐ দোকানদার অর্থনীতি বিভাগের ১২তম ব্যাচের প্রান্ত নামের এক ছাত্রকে ওরা একটা দোকানের শার্টার আটকে রেখে মারধর করেন। এরপর কিছু ছাত্র প্রান্তকে উদ্ধার করতে নাকি দোকানে গেছেন। পরে আমি ঘটনাটা দেখার জন্য গেটের দিকে যাই। দোকানদারকে কারা মেরেছে সেটা আমার জানা নাই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আমার কোন নির্বাহী পদ নাই, তাই আমার কোন অনুসারীও এখন নাই। আর আমার নামে বাকি খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। দোকানদারই বা আমার নামে বাকি দিতে যাবেন কেন।
এ বিষয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, আমি ঘটনাটা কিছুটা শুনেছি। এটা যেহেতু ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা তাই এ বিষয়ে আমার কোন মন্তুব্য নাই। যারা ভুক্তভোগী তারা যা করার করুক, এতে আমার কোন আপত্তি নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু দোকানদার এবং শিক্ষার্থী কারো কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা দুই পক্ষের সাথে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি দোকানের দুইজন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সেটা শুনেছি কিন্তু আমরা কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।