মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আওয়ামী লীগের কোন্দলে পুরুষশূন্য গ্রাম, নারীদের ওপর হামলা-মারধর

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৭

আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের কোন্দল হামলা পাল্টা হামলায় রূপ নিয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় দু’পক্ষের অন্তত ৩০টি বাড়িতে ভাঙচুর শেষে লুটপাট চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২২ জন। চারটি গ্রাম পুরুষশূন্য হওয়ায় এসব এলাকায় নারীদের ওপর হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোর ছয়টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকারের সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের সমর্থক বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর ও লুটপাট করেন। 

এ ঘটনায় বিল্লালসহ তার ছেলে ইমরান (৩৫), স্ত্রী সাবিহা (৫৫), মেয়ে নাজমা (১৮) আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ইমরানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে ধারাবারিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার অভিযোগ করে ইত্তেফাককে বলেন, মতিন গ্রুপের সমর্থক বিল্লাল ও তার লোকজন সোমবার সকাল ১০টার দিকে হামলা চালিয়ে রহিম সরকার (৬০), ইসমাইল মোল্লা (৫৫), হবি সরকার (৫০), আমির সরকার (৫৫) ও শিল্টু সরকারকে (৪০) পিটিয়ে গুরুতর যখম করেছে। আহতদের মধ্যে আব্দুর রহিম, ইসমাইল ও হবিকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

এভাবে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবারিষা মোল্লাপাড়া, ফকিরপাড়া, দাদুয়া ও তালবাড়িয়া গ্রামে ধারাবাহিকভাবে এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেনি। বরং আইনের আশ্রয় না নিয়ে দুইক্ষের বিরুদ্ধেই হামলা সংঘর্ষে জড়ানো অভিযোগ রয়েছে। গত ১৬ দিন ধরে চলা এই সহিংসতা রোধে পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন।

জানা গেছে, মূলত নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ-নৃশংসতা শুরু হয়। বিশেষ করে উপনির্বাচনের জন্য বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তার কর্মী-সমর্থকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এছাড়া প্রয়াত সংসদ সদস্য পক্ষের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন গ্রুপও ওই প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।    

হাসপাতালে শুয়ে ভুক্তভোগী নাজমা (১৮), সাবিহা (৫৫) ইত্তেফাককে জানান, তারা এমপি সমর্থক হওয়ায় ধারাবারিষা ফকিরপাড়ার মৃত আহাদ আলী হাদার ছেলে মো. হাবিব মণ্ডল (২৮) ও তার ফুফাতো ভাই রিপন সরকার, আমিনুল হক ওরফে আমানত হাজীর নেতৃত্বে ধারাবারিষা ফকিরপাড়া, মোল্লাপাড়া ও তালবাড়িয়া, দাদুয়া তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর নৃশংস হামলা ও লুটপাট করা হচ্ছে। হামলা চালিয়ে গরু-ছাগলসহ বাড়ির বিভিন্ন মালামাল ও নগদ টাকা, ভ্যান, অটোবাইকসহ জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। ওই সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভুক্তভোগীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

যুবলীগ কর্মী হাবিব মণ্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মতিন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সোহানের নেতৃত্বে এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তিনি এই হামলার বিচার চান।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মোনোয়ারুজ্জামান বিবাদমান দু’পক্ষের সংর্ঘষের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, কোনো পক্ষই মামলা করেনি। মামলা হলে আইনানুগ ব্যববস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/পিও