বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

জাবিতে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করল ছাত্রলীগ, নিয়োগ বোর্ডে বাঁধা

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৮

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাঁধা প্রদান ও প্রার্থীদের উপাচার্যের দফতর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্যের দফতরের সামনে অবস্থান নিয়ে গেইট আটকে রাখেন তারা।

জানা যায়, সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস'র শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের দফতরে গিয়ে প্রার্থীদের বের করে দিয়ে গেইট আটকে দেন। এ সময় তারা প্রার্থীদের বলতে থাকেন, 'আজকে বোর্ড হবে না, আপনারা চলে যান।' পরে দুপুর ১২টায় উপাচার্যের নির্দেশনায় তার একান্ত সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস গিয়ে অনিবার্য কারণে বোর্ড স্থগিতের বিষয়ে প্রার্থীদের জানান। এছাড়া বোর্ড কবে বসানো হবে- তা পরবর্তীতে জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, ট্রেজারার অধ্যাপক রাশেদা আখতার ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সুত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপরিকে নিয়োগ না দেওয়া হয়নি। সেখানে বিভাগের অন্য তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে অবরুদ্ধ করেছেন। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের দফতরে গিয়ে অবরোধের হুমকি দিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল গোলদার বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাহিরে কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অনেকবার জানিয়েছি। স্যার আজকে অপারগ হয়ে জানিয়েছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোকদের চান কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী লোকদের শিক্ষক হিসেবে চাই না।'

এদিকে ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস'র শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাঁধা প্রদান ও প্রার্থীদের উপাচার্যের দফতর থেকে বের করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের ইন্সটিটিউটে শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি। একটি শুন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন ক্যান্ডিডেট ছিলো। তবে বোর্ড স্থগিত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, 'ছাত্রলীগ কোনো শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।'

ছাত্রলীগ নেত্রীর নিয়োগের সাথে অবরোধের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আজকের কর্মসূচির সাথে রসায়ন বিভাগের নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তো চাইলেই সিন্ডিকেট আটকে দিতে পারতাম। আমরা চাই স্বজনপ্রীতি বাদ দিয়ে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হোক।'

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, 'অনিবার্য কারণবশত আজ নিয়োগবোর্ড স্থগিত হয়েছে। এটা অনেক কারনেই হতে পারে। তবে আজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের বের করে দেয়। ফলে এক্সটার্নালরা উপস্থিত থাকার পরও নিয়োগ বোর্ড বসানো যায়নি।'

তিনি আরো বলেন, 'আমাকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি। তারা স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে দাবি জানিয়েছে। তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, আমার হাত দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী কারও নিয়োগ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে না।'

ইত্তেফাক/এআই