ভারত-কানাডার সম্পর্কের তিক্ততার রেশ গিয়ে পড়ছে পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ের ওপরেই। এমনই বার্তা দিয়েছেন শিখ ধর্মাবলম্বীরা। তাছাড়া শিক্ষা ও উন্নত জীবনের খোঁজে কানাডায় যাওয়াও তাদের বন্ধ হয়ে যাবে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের খবরে বিষয়টি উঠে এসেছে।
সম্প্রতি খালিস্তান আন্দোলনের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত জড়িত রয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে দিল্লি কতৃপক্ষ।
খবরে বলা হয়, হরদীপ বছর ২৫ আগে পাঞ্জাবের ভরসিংপুরা থেকে কানাডায় যান ও সেখানে নাগরিক হিসেবে থিতু হন। ভরসিংপুরা থেকে তার চাচা ৭৯ বছর বয়সী হিম্মত সিং নিজ্জর জানিয়েছেন, ‘স্থানীয় মানুষ মনে করেন ট্রুডো খুব সাহসের কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য তিনি বিশাল একটা ঝুঁকি নিয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘এখানকার প্রায় সব পরিবারই তাদের সন্তানদের কানাডা পাঠাতে চায়। এখন চাষের অবস্থা খারাপ।’
‘ভারত এই শিখদের শত্রু বলে মনে করে ও তাদেরকেই টার্গেট করে আসছে’
- কানওয়ার পাল
রাজনৈতিক সচিব, খালসা
এদিকে, কানাডায় এখন তিন লাখ ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী আছে। অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দির চত্বরে ১৯ বছর বয়সী গুরসিমরান সিং জানালেন, ‘আমাদের ভয়টা হলো ভারত সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে কানাডা আর তাদের ভিসা দেবে না।’ এই স্বর্ণ মন্দিরেই সবাই স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার পর কৃতজ্ঞতা জানাতে আসে। এই স্বর্ণ মন্দির চত্বর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবিলা করতে সেনা পাঠিয়েছিলেন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। পরবর্তীতে দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল তাকে।
খবরে আরও বলা হয়, বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শিখ কৃষক সংগঠনের সম্পর্কও খুব একটা উষ্ণ নয়। কারণ, তাদের সারা বছর আন্দোলনের ফলে তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে হয়েছিল মোদিকে। ভরসিংপুরা থেকে ৩১ বছরের সন্দীপ সিং জানিয়েছেন, ‘মোদি সরকার একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে। যুবসমাজ এটাই ভাবছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি প্রতিবাদ করি এবং বিক্ষোভ দেখাই তাতে পরিবারের মানুষ আতঙ্কিত হন। তারা মনে করেন, তাদের শিশুদের অবস্থাও নিজ্জরের মতো হবে।’
চরমপন্থি দল খালসার রাজনৈতিক সচিব কানওয়ার পাল বলেন, ‘যারা খালিস্তানের জন্য লড়াই করছে তারা আত্মনিয়ন্ত্রণ ও পাঞ্জাবে গণভোটের জন্য লড়ছে। ভারত এই শিখদের শত্রু বলে মনে করে ও তাদেরকেই টার্গেট করে আসছে।’
কিন্তু বিজেপি মুখপাত্র এই অভিযোগের জবাব দিতে চাননি। তবে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, পাঞ্জাবের মানুষ খালিস্তানের সমর্থক নন। এ ধরনের দাবি ভারতের জন্য বিপদের কারণ। তাদের দাবি, মোদি শিখদের জন্য যা করেছেন তা আগে কেউ করেননি।