জাপানের ‘পলিটিক্যাল ফান্ড কনট্রোল ল’ বা ‘রাজনৈতিক তহবিল নিয়ন্ত্রণ আইন’ অনুসারে দেশটির আইনপ্রণেতাগণ রাজনৈতিক বিভিন্ন গ্রুপ হইতে তহবিল সংগ্রহ করিতে পারেন। অর্থাত্ আইন অনুসারে ইহা নিষিদ্ধ নহে। তবে দেশটির নির্বাচন আইন অনুসারে, নির্বাচনের পূর্বে যদি কোনো গ্রুপ সরকারের সঙ্গে বাণিজ্যে সম্পৃক্ত থাকে, তাহা হইলে তাহাদের নিকট হইতে কোনো তহবিল গ্রহণ করা যাইবে না। ইহা ছাড়াও জাপানের আইন অনুসারে সংগৃহীত তহবিল ঘোষণা করিতে হয়। এই ক্ষেত্রে অতি সামান্য ব্যত্যয় ঘটিয়াছে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে। উহা প্রকাশ পাইয়াছে সম্প্রতি। প্রথমত, ২০২১ সালে তহবিল সংগ্রহের সময় মাত্র কয়েক লক্ষ ইয়েনের গরমিল ধরা পড়িয়াছে; ‘ধরা পড়িয়াছে’ না বলিয়া ‘চোখে পড়িয়াছে’ বলিলেই উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করা হইবে। উল্লেখ থাকে, জাপানের ১ লক্ষ ইয়েনের মূল্য ৬৭০ ডলার মাত্র। আরো একটি অভিযোগ উঠিয়াছে যে, দাতা সংস্থার নাম সঠিকভাবে উল্লেখ এবং তহবিল প্রদানের তারিখ সঠিকভাবে প্রদর্শিত হয় নাই। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর অফিস বলিয়াছে, ইহা ‘ক্লারিক্যাল’ বা ‘দাপ্তরিক’ ভুল হইয়াছে এবং তাহা সংশোধন করা হইয়াছে। তাহা হইলে কী হইবে, জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইবার কারণে গত মাসে প্রধানমন্ত্রী কিশিদা তাহার কেবিনেটের চার জন সদস্যকে ছাঁটাই করিয়াছেন। নূতন কেবিনেট সদস্যরা স্বীকার করিয়াছেন, এই তহবিল সংগ্রহ লইয়া কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়াছে।
জাপানসহ উন্নত দেশগুলিতে তহবিল সংগ্রহের এই আইনগত বৈধতা রহিয়াছে। ইহার কারণ হইল, ঐ সকল দেশ সাধারণত তহবিল সংগ্রহ লইয়া এতটাই স্বচ্ছ হইয়া থাকে যে, ইহা সম্পর্কে সাধারণ্যের জ্ঞাতসারেই গৃহীত হয়। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল বিশ্বে এই ধরনের তহবিল সংগ্রহে কোনো আইনগত বৈধতা নাই। কিন্তু বাস্তবে তহবিল সংগ্রহের হোলি খেলা চলিতে থাকে। কোনো রকমের জবাবদিহিতার বালাই থাকে না। এই সকল দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কথিত চাঁদা গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য হয় না, কিন্তু ক্ষমতা হইতে নামিয়া গেলেই বাহির হইয়া আসে থলের বিড়াল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবার যাহাদের নিকট হইতে চাঁদা গ্রহণ করা হয়, তাহাদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হইয়া থাকে। তাই এক কথায় বলা যায়, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য যেই তহবিল সংগ্রহ করিয়া থাকে, যাহাকে ‘সফট মানি’ বলা হয়; বর্তমানে ইহাকে ‘ননফেডারেল কন্ট্রিবিউশন’ অথবা ‘পেপার মানি’ও বলা হইয়া থাকে। কারণ এই অর্থ ডিজিটাল মুদ্রা, যেমন—বিটকয়েন, ক্রিপ্টোকারেন্সি অথবা কোনো ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় না।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এমন এক বিষয়—যাহা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সর্বমহলের সদিচ্ছা থাকিতে হয়। আমরা সম্প্রতি দেখিয়াছি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সিনেটর বব মেনেনডেজ স্বর্ণের বার, ডলার উপহার লইয়া তাহার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হইয়াছেন। যুক্তরাষ্ট্রের তাহারই দলের কিছু সদস্য ইতিমধ্যেই তাহাকে পদত্যাগ করিতে বলিয়াছেন। কেহ কেহ আগ বাড়াইয়া বলিয়াছেন, তিনি পদত্যাগ না করিলে তাহার কোনো কথাই তাহারা শুনিবেন না। যে কোনো দল কিংবা যে কোনো জনপদে এই নৈতিকতা এবং জবাবদিহিতা তৈরি না হইলে সেইখানে যেই তিমির জমিয়া থাকে, তাহা সেই তিমিরেই থাকিয়া যায়।