বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

চট্টগ্রামে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির কোটি টাকার নতুন মেশিন বাক্সবন্দি

এক বছরেও স্থাপন করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০২:০০

চট্টগ্রামের ওষুধের মান যাচাইয়ের জন্য আমদানি করা কয়েক কোটি টাকার মেশিন গত এক বছরের অধিক সময় যাবত বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কয়েকটি মেশিন বসানো হলেও গুরুত্বপূর্ণ দুইটি মেশিন না বসানোর কারণে ওষুধের মান পরীক্ষায় ব্যবহার হচ্ছে। দীর্ঘ সময় মেশিন ব্যবহার না হওয়ায় নতুন এসব মেশিনের কার্যক্ষমতা হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো মেশিনগুলো স্থাপন করে চালু করে দেওয়া। কিন্তু গত এক বছরেও তারা মেশিনের সেটআপ পুরোপুরি স্থাপন করতে পারেনি। এসব মেশিন স্থাপন করা গেলে চট্টগ্রাম ল্যাবে অ্যালোপ্যাথিকের ৮০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাই করা সম্ভব হবে। বর্তমানে মেশিন স্বল্পতায় অ্যালোপ্যাথিকের ১০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাই করা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওষুধের মান যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে দুটি সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি রয়েছে। তার মধ্যে স্বাধীনতার আগেই চট্টগ্রামে ল্যাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে গুরুত্ব বিবেচনা করে  ল্যাবটি স্থাপন করা হয়। চট্টগ্রামের পরে ঢাকায় সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হলেও সেটি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের ল্যাবটিতে উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন না করায় পিছিয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সময়ে  ল্যাবের আধুনিকায়নের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের ল্যাবের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি নেওয়ার লক্ষ্যে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই জন্য ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯ ক্যাটাগরির ৭৮টি মেশিন কেনা হয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে এসব মেশিন আমদানির পর চট্টগ্রামের ল্যাবে নিয়ে আসা হয়। মেশিনের পুরো সেটআপের মধ্যে দুটি হাইপারফরমেন্টস লিকুইড কোমেট্টোগ্রাফ (এইচপিএলসি) ও তিনটি ইউভি মেশিন গুরুত্বপূর্ণ।  তার মধ্যে অন্যতম দুইটি  এইচপিএলসি মেশিন এখনো স্থাপন করা হয়নি।’

চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরিচালকের একটি পদ রয়েছে। গত কয়েক মাস যাবত পদটি খালি রয়েছে। বর্তমানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের একজন সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছে। জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন ইত্তেফাককে বলেন, মেশিনগুলো বসানোর দায়িত্ব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের। তারা কয়েক মাস আগে এসে কিছু মেশিন স্থাপন করেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এইচপিএলসি মেশিন স্থাপন করেনি। এই মেশিন স্থাপনের কিছু যন্ত্রের স্বল্পতা রয়েছে। দ্রুত সময়ে বাকি মেশিন স্থাপন করবেন বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’

সরেজমিনে দেখা গেছে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি ভবনে দীর্ঘদিন যাবত ওষুধের মান যাচাইয়ের কাজ চলছে। ভবনের নিচ তলায় রয়েছে ওষুধের মান যাচাইয়ের ল্যাব। কিন্তু বৃষ্টি ও জোয়ারের সময় ল্যাবের নিচ তলায় পানি ঢুকে পড়ে। ফলে এখন ল্যাবটি নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ ল্যাবের কার্যক্রম পরিচালনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঘনঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়া মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেশিনের জন্য যে মাত্রায় বিদ্যুতের দরকার তার চেয়ে কম মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিদ্যুতের  ভোল্টেজ ২০০-এর কম হলে ল্যাবের মেশিন চালানো সম্ভব হয় না। অথচ ১৬০ ভোল্টেজের বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে ল্যাবের জন্য একটি সাবস্টেশন স্থাপন প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিভাগ একটি সাবস্টেশন স্থাপন করতে গেলে  ৭৫ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।

ল্যাবে ওষুধের মান যাচাইয়ের কেমিক্যালের রি-এজেন্ট দরকার। এর স্বল্পতায় মান যাচাই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই খাতে কমপক্ষে বছরে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বরাদ্দ একেবারে অপ্রতুল। ওষুধের মান যাচাইয়ের জন্য ৬০ আইটেমের কেমিক্যাল প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমরা ২৬ আইটেমের কেমিক্যাল সরবরাহ পাচ্ছি। ল্যাবে টেকনিক্যাল জনবল সংকট প্রকট।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ল্যাবে অ্যালোপ্যাথিক, হোমিও, ইউনানী ও আয়ুর্বেদ ও হারবাল চার ধরনের ওষুধের মান যাচাই করা হয়। ল্যাবে মেশিনারি স্বল্পতায় অ্যালোপ্যাথিকের মাত্র ১০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাই সম্ভব হচ্ছে। তবে অন্যান্য ক্যাটাগরির সব ওষুধের মান যাচাই করা যায়। ল্যাবে মান যাচাইয়ের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১৫০-এর মতো ওষুধের নমুনা আসে। তার মধ্যে মাসে ৬০ থেকে ৭০টি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ল্যাবের বর্তমান ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই পার্শ্ববর্তী জায়গায় পুরোনো একটি ভবন ভেঙে ল্যাবের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ৫তলা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে ঐ জায়গায় বিরাজমান পুরোনো ভনটি ভাঙার টেন্ডার হয়েছে। এই ভবনটি নির্মিত হলে সেখানে মাইক্রোবাইলজিক্যাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। তখন চট্টগ্রামের ল্যাব একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাবে রূপান্তরিত হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম