বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ডেঙ্গুতে এক দিনে ২৪ জনের রেকর্ড মৃত্যু

মশা মারার কাজ আমাদের না, এটাকে ধ্বংস করতে হবে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর 
এত উপদেশ দেওয়ার পরও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না: বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ

আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৩

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একদিনেই মারা গেলো ২৪ রোগী। যা এ যাবতকালের ডেঙ্গুতে মৃত্যু সর্বোচ্চ রেকর্ড। সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় এত মানুষের মৃত্যু আগে কখনো হয়নি। চিকিত্সকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সরকারি যেসব সংস্থা মশা নিধনের দায়িত্বে রয়েছেন তারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। যদি করতেন তাহলে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করত না। চিকিত্সকরা বলছেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে অন্যান্য রোগের চিকিত্সা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একমাত্র মশা নিধনই করতে পারে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার কমাতে। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে একদিনে যত রোগী মারা গেছে এটি হলো সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। প্রতি দিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু চিহ্নিত এডিস মশার কামড়ে এই রোগ হয়। এই মশা বংশ বিস্তার করেই যাচ্ছে। কিন্তু এটা নিধনে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো কার্যকর ভূমিকা নাই। এরা ব্যস্ত নানা কাজে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যদি মশা নিধনকে অগ্রাধিকার দিত তাহলে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হত না। এই রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও কোন ভূমিকাও রাখছে না।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মনে হচ্ছে মশা নিধনের কার্যক্রম নিয়ে কর্মকর্তারা হাতগুটিয়ে বসে আছে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর। শীতকালে ডেঙ্গু রোগী কমবে এই আশায় বসে আছে। কিন্তু সেই আশা গুড়ে বালি। মশা নিধন না করার কারনে শীত মৌসুমে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এতেই প্রমাণিত হয় ডেঙ্গু মশা নিধন ছাড়া এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এটা দৃশ্যমান প্রমাণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক ও এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কোন কোন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে এর কারন বের করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অন্য কোন কারনে মৃত্যু হচ্ছে কিনা সেটা নির্ণয় করা দরকার। অপরদিকে গতানুগতিক যে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে তার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। সেখানে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষুধ সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি নিজেও এই ঔষুধ ব্যবহার করে ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে ভালো ফল পাচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে কারো মৃত্যু হয় না । রোগী দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন। তিনি বলেন, আমরা চিকিত্সকরা বারবার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মশা নিধন নিয়ে কেউ কর্নপাত করছে না। হাসপাতালে আমরা শুধু স্বজনহারাদের কান্না দেখছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজ হলো চিকিত্সা দেওয়া। আমরা চিকিত্সা দিয়ে যাচ্ছি। মশা নিয়ন্ত্রণ না করলে এই রোগে আক্রান্তের হারও বাড়বেই। তিনি বলেন, মশা নিধনের কোন বিকলল্প নাই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালীডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকদের সঙ্গে এই ডেঙ্গু রোগীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, ডেঙ্গু বাড়ছে। মৃত্যুর হারও বাড়ছে। হাসপাতালে আসার দুইদিনের মধ্যে বেশিরভাগ ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যু হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় সার্জারি, গাইনি সহ অন্যান্য রোগের চিকিত্সা সেবা মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে। এভাবে মশা নিধন করা না হলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লে অন্যান্য রোগীদের চিকিত্সা সেবা নিয়ে হাসপাতালগুলি মহাসংকটে  পড়বে। অন্যান্য রোগীদের মৃত্যুর হারও বাড়বে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানানো হয় যে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৬২৩ জন ডেঙ্গুরোগী। অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিত্সাধীন আছেন পাঁচ হাজার ৭৫৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক হাজার ৬২৩ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৪৯, এবং ঢাকার বাইরের এক হাজার ২৭৪ জন। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৩ জন, ঢাকার বাইরের ১১ জন।

ইত্তেফাক/কেকে