বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

পাঠকের চিঠি

নদী সংরক্ষণ

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:১০

মানব সংস্কৃতি ও উন্মেষ এবং ক্রমবিকাশের সঙ্গে নদী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ও বৃহত্ সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। বাংলাদেশের বুক চিরে ছোট বড় প্রায় ৭০০-র মতো নদ-নদী বয়ে গেছে। একসময় নদীই ছিল যোগাযোগের প্রধান পথ। কৃষিকাজের সেচের একটি প্রধান উত্স হিসেবে কাজ করে আসছে বহুকাল থেকেই। বাংলাদেশের এত উর্বর মাটি সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারিগর হিসেবে পলিমাটির জোগান দিয়েছে এই নদীগুলোই। ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা উচ্চ রাখতে ভূমিকা রেখেছে নদীগুলো—যা গৃহস্থলি, খাবার, কৃষিকাজ ও শিল্প কারখানার কাজসহ অন্যান্য কাজের প্রধান সহায়ক। সামুদ্রিক অনেক মাছ প্রজননের সময় নদীতে এসেই ডিম পাড়ে বংশ রক্ষার জন্য।  

আমাদের এত গুরুত্বপূর্ণ নদী আজ অবহেলা ও ভোগদখলে প্রকৃতি থেকে হারাতে চলেছে। তার কারণ প্রকৃতিবিমুখী কর্মকাণ্ড। আমরা নদী ভরাট, কলকারখানার বর্জ্য, জাহাজের তেল, নগরের আবর্জনা ইত্যাদি নদীতে ফেলে নদীকে দূষিত করছি। ফলে অনাবৃষ্টি, তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আবির্ভাব ঘটছে দ্রুত যা আগে এত কাছাকাছি সময়ে কখনো ঘটেনি।

১৯ শতকের দিকে গোটা অঞ্চলে ছোট বড় মিলিয়ে নদীর সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজারের মতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বর্তমানে নদীর সংখ্যা ৪৫০। বেসরকারি হিসেবে ৭০০। নদী গবেষকদের মতে, নদী কখনো একা মরে না। নদীর মৃত্যু হলে পাড়ের জনপদও একটু একটু করে মরতে শুরু করে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বংশী, বালু এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দুধারে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় এসব নদী ধীরে ধীরে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থা।

বর্তমান সময়ে নদীদূষণের সবচেয়ে বড় কারণ—অবৈধ দখল, শিল্পায়ন ও উন্নয়নের নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং শিল্প কারখানার বর্জ্য। নৌকা ও জাহাজ থেকে তেল নিঃসরণেও নদী দূষিত হয়। কৃষিজমিতে ব্যবহূত রাসায়নিক সার, কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীর পানিতে মিশে দূষিত করছে নদীর পানি। নদীতে গবাদি পশুর গোসল, মৃত পশুপাখি, পরিত্যক্ত আবর্জনায় নদী দূষিত হচ্ছে। দখলদারদের লালসার শিকার হয়ে নদী হয়ে পড়ছে অনাব্য। নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নদীপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে নদী তার যৌবন হারিয়ে পরিণত হচ্ছে মরা খালে! আবার কখনো পালটে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। মানুষসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর জীবনে নদীদূষণের প্রভাব বেশ ভয়াবহ। নদীতে বর্জ্য মিশে নদীকে দূষিত করে জলজ প্রাণী ও মানুষের নানামুখী ক্ষতি সাধন করছে। নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্যসহ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদী থেকে ধরা মাছ আমরা খাচ্ছি। মাছের পেটে পলিথিন হজম না হওয়ায় মাছের সঙ্গে আমরাও পলিথিনের ছোট্ট কণাগুলো খেয়ে ফেলছি। এই দূষিত ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করার ফলে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

নদীদূষণ রোধে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। এর জন্য তৈরি করতে হবে বর্জ্য শোধনাগার। বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। নদীকে তার গতিপথে চলতে দিতে হবে। যথাযথভাবে মেরামত করতে হবে নৌকা ও জাহাজ। যাতে তেল নিঃসরণ না হয়। শিল্পকারখানা ও ইটভাটা নদী থেকে দূরে নির্মাণ করতে হবে। দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর কারণে যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। নদীদূষণ রোধে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য একযোগে কাজ করতে হবে সামাজিক সংগঠন, এনজিও ও সরকারকে। নদী রক্ষায় প্রয়োজনে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন