শুষ্ক মৌসুমে নাব্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে দুর্গাপুরের পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী। নদীর আয়তন আর আকার ছোট হতে হতে এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, নদীর পশ্চিম দিকে এখন সাঁকো তৈরি করে লোকজন নদী পারাপার হচ্ছেন। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বালুর চর। সেখান থেকে তোলা হচ্ছে বালু ও পাথর। অবিলম্বে নদীটি খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নদী তীরে বসবাসকারী বিভিন্ন পেশার মানুষ।
জানা যায়, সোমেশ্বরী নদী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত দুর্গাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার এবং কাগজেপত্রে এর গ্রন্থ ১১৪ মিটার। আর নদীর গতিপ্রকৃতি হচ্ছে সর্পিলাকার। নদীর দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলেও এর প্রন্থ এখন ৭০-৮০ মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই বর্ষায় বালিতে ভরাট নদীতে যখন পাহাড়ি ঢল নামে তখন দুই পার ভেঙে চুরমার করে দেয়।
দুর্গাপুরের সমাজকর্মী মোহন মিয়া বলেন, নদীর গ্রন্থ দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বর্ষাকালে দুই/তিন মাস নদীতে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। নৌচলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকে নৌবাণিজ্য। নদীর নাব্য ধরে রাখতে হলে দরকার নদী খনন। কিন্তু নদী খনন করলেও তেমন লাভ হবে না। ঢলের সঙ্গে পাহাড় থেকে বালি এসে আবার তা ভরাট হয়ে যাবে। এর বিকল্প কোনো চিন্তা করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নেত্রকোনার পরিবেশবিদ অহিদুর রহমান, সাইফুল্লাহ এমরান এবং উন্নয়ন কর্মী মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী বলেন, সোমেশ্বরী নদীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে এর উৎসমুখে আগে খনন করতে হবে যারা বালির ব্যবসা করেন, তাদের নির্ধারিত লিজ নেওয়া এলাকা থেকে বালি উত্তোলন করতে হবে। দুর্গাপুর পৌরসভা এবং শিবগঞ্জ বাজার রক্ষার জন্য নদীর উভয় দিকে শক্ত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া বালির কারণে দুর্গাপুর পৌর এলাকা এখন বিধ্বস্ত রূপ নিয়েছে, তা রোধ করতে হলে বালি পরিবহনের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
তারা আরও বলেন, সরকার এই নদীর বালি বিক্রয় প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার মতো আয় করছে। সেই টাকা থেকে প্রতি বছর কিছু টাকা খরচ করে নদীর পাড় রক্ষা করা যেমন সহজ হতো, তেমনি আগাম বন্যার সময় নদীর পানি ও আশেপাশের জমিতে বালি আসতে পারত না। ফসলি জমি নষ্ট হতো না।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, সোমেশ্বরী নদীকে রক্ষা করতে হলে নদী থেকে বালি উত্তোলন করতে হবে। আর তা না হলে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা বালিতে নদী ভরাট হয়ে যাবে। বন্যায় এই বালি আশপাশের ফসলি জমি গ্রাস করবে। ইতিমধ্যে শত শত একর জমিতে বালি স্তর পড়েছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, সোমেশ্বরী নদী পাহাড়ি নদী হওয়ায় বর্ষাকালের রূপ থাকে ভিন্ন। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে খুব কম পানি থাকে। নদীর খনন নিয়ে উর্ধ্বতন মহল কাজ করছে। তবে, এই নদী থেকে বছরের পর বছর ধরে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে পানি থাকে।
তিনি জানান, বালি উত্তোলনের জন্য যারা লিজ নিয়েছেন, তারা নির্ধারিত জমির বাইরে বালি তুলতে পারবেন না। কেউ তা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।