শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর দুই পাড়ে ৩৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদীর দুই পাড়ে পুরোদমে চলছে বাঁধ নির্মাণের বিশাল কর্মজজ্ঞ। ধীরে ধীরে ৫০ বছররের ভাঙন কবলিত কীর্তিনাশা নদীর পাড় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করায় স্বস্তি ফিরে এসেছে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর নড়িয়া থেকে প্রবাহিত হয়ে সদর উপজেলার ওপর দিয়ে কীর্তিনাশা নদীটি মাদারীপুর সদরের রাজারচর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীতে মিলেছে। প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলে নড়িয়া ও শরীয়তপুর সদরের ২০টির বেশি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেয়। এতে বহু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলী জমি, গাছপালাসহ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। নদীর এই ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল ভাঙন কবলিত দুই পাড়ের মানুষ।
২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেকে কীর্তিনাশা নদীর ডান ও বাম তীর রক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১১.৮৪ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, ৩.৮৫ কিলোমিটার সতর্কতামূলক নদী তীর সংরক্ষণ ও দুটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শরীয়তপুরের দুটি পৌরসভা, ৮টি ইউনিয়ন ও মাদারীপুরের একটি ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে। এতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ৯ মার্চ প্রকল্পটির ১১.৮৪ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক জানান, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২১টি প্যাকেজে ১১.৮৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ চলমান আছে। এ জন্য একাধিক ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ৯টি প্যাকেজে ৩.৮৫ কিলোমিটার সতর্কতামূলক নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ও একটি প্যাকেজে একটি এক ভেন্ট ও একটি দুই ভেন্টের রেগুলেটর নির্মাণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১১.৮৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজের পুরোটা প্রথমে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। এরপর ব্লক ডাম্পিং, পরে স্লপ (ঢাল) প্রস্তুত এবং সর্বশেষ ব্লক প্লেসিং করা হবে। ৩.৮৫ কিলোমিটার সতর্কতামূলক নদী তীর সংরক্ষণ কাজের প্রথমে জিও ব্যাগ ডাম্পিং, এরপর স্লপ প্রিপারেশন এবং সর্বশেষ স্যান্ড সিমেন্ট ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবিব বলেন, প্রকল্পটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরু থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট টিম তদারকি করে যাচ্ছেন। কাজের গুণগত মান নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। সবাই সন্তোষজনক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আশা করছি, গুণগত মান বজায় রেখেই প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, কীর্তিনাশা নদীর ভাঙন দুই পাড়ের বহু মামুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙন রোধে প্রকল্প দিয়েছেন। এ জন্য আমরা শরীয়তপুরবাসী তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কাজ সম্পন্ন হলে দীর্ঘদিনের ভাঙন থেকে আমরা রক্ষা পাবো এবং ভাঙন কবলিত নদীর তীর পর্যটন এলাকায় পরিণত হবে।
বাধের তিন কিলোমিটার ওয়াকওয়ে করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর নাম দেয়া হয়েছে ‘স্বাধীনতা চত্ত্বর’। সেখানে সৌন্দর্য উপভোগ ও বিনোদনের জন্য মানুষ ঘুরতে আসবে। পাশাপাশি অত্র এলাকার সার্বিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, নড়িয়া, সখিপুরের মতো ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে কীর্তিনাশা নদীর পাড়ের মানুষ। গুণগত মান রক্ষা করে বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।