হাজারো তরুণের স্বপ্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্পন্ন বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্জন করা। নিজেদের চিরায়ত ‘কমফোর্ট জোন’-এর বাইরে পা ফেলে আরও দক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল হতে শেখার উদ্দেশে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ প্রতিবছর ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকা-সহ ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। সফল ও যোগ্য বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও রীতিনীতির সঙ্গে তারা পরিচিত হচ্ছেন।
ইউনেস্কো’র পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৮ সালে পড়াশোনার উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৬ হাজারের কিছু বেশি। ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, অর্থাৎ মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে ৩ গুণ বেশি শিক্ষার্থী এখন প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাত্রা করছেন। বিদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত ডিগ্রি পরবর্তীতে বিশ্ব বাজারে তাদের চাকরির সম্ভাবনাও অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। তবে এই সূবর্ণ সম্ভাবনা ও সাফল্যের হাতছানি দেখে প্রায়শই শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা প্রাথমিকভাবে এই উচ্চশিক্ষা প্রক্রিয়ার দীর্ঘ ও জটিল চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনা করতে ভুলে যান, যা পরবর্তীতে তাদের অনেকের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার জন্ম দেয়।
প্রথমেই বেশিরভাগ তরুণ শিক্ষার্থীর জন্য যেটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, সেটি হল স্বাবলম্বিতা অর্জন করা এবং সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা। ভিন্ন রীতির আচার-আচরণ, আলাদা সামাজিক নিয়ম-কানুন, মূল্যবোধ এবং প্রত্যাশার মুখোমুখি হয়ে তরুণদের অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন। পরিবার ও স্বজনদের ছেড়ে দীর্ঘদিনের একাকী ও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন তাদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্ণতা জন্ম দেয়। অনেকক্ষেত্রে অভিবাসনগত নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা অনেকের জন্য অনিশ্চয়তা এবং আইনি সমস্যাও তৈরি করে। এতসব দিক সামলানোর পর শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাত্রার মূল যে উদ্দেশ্য, অর্থাৎ মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা ও ভালো ফলাফল নিশ্চিত করা – সেটি রক্ষা করাই দূরহ হয়ে পড়ে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে সঠিক কাউন্সিলিং।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব কিছু মতামত বা পছন্দ-অপছন্দ ও নিজ নিজ আর্থিক পরিকল্পনা থাকে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে বাস্তবতার নিরিখে তাদেরকে সঠিক ও তথ্যবহুল দিকনির্দেশনা দানের নামই কাউন্সেলিং। বিদেশে ভর্তি ও বৃত্তির আবেদনকে জোরদার করে তোলার জন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে এসএটি, টোফেল, আইইএলটিএস, জিম্যাট, জিআরই প্রভৃতি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন ও সেরা ফলাফল নিশ্চিত করবেন– তাও এধরণের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়। বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের জন্য বিশেষ বৃত্তি, ছাড় বা ওয়েভার দেয়া হয়। এগুলোর শর্তাবলি সঠিকভাবে জানা ও আবেদনের ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো দেশে বসেই সরাসরি বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার অনন্য সুযোগ গড়ে তুলছে। ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ (ইউসিবি) দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি বাংলাদেশের মেধাবি তরুণদের সামনে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে সরাসরি পড়ার পথ তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটির ফাউন্ডেশন ইয়ার প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিদেশে ভালো ফলাফলের জন্য একাডেমিক প্রস্তুতির পাশাপাশি বিভিন্ন কাউন্সেলিংয়ের সুবিধাও পেয়ে থাকে, যা তাদেরকে সফলভাবে নিজ স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
বিদেশে অধ্যয়নের প্রক্রিয়াটি নিঃসন্দেহে কষ্টসাধ্য, কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি ও মনোবল এটিকে এক ফলপ্রসূ এবং সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায় রূপ দিতে পারে। ভবিষ্যতে বিদেশে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সংখ্যা আরও বাড়বে, সুতরাং আমাদেরকেও সার্বিকভাবে এই প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সকলের আয়ত্ত্বাধীন করে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে যাতে কোনো সম্ভাবনাময় তরুণকে হতাশা বা অবসাদের কাছে হেরে যেতে না হয়– তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।