নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে যথাযথ মর্যাদা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন
‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে মিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের উপস্থিতিতে দিবসটি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিবসটির স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন ও গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ৭১ এর গণহত্যার উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ১৯৭১ সালে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে, ইতিহাসের এই ভয়াবহ ঘটনার নথিসমূহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এর পাশাপাশি, জাতীয়ভাবে এই নথিসমূহ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এসময় রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, ১৯৭১ সালে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন কাজ করে যাচ্ছে এবং এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চ সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় "গণহত্যা দিবস" পালিত হয়েছে ।
১৯৭১ সালের ঐদিন কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে দূতাবাস বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করে। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান ডিফেন্স অ্যাটাচে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহেদুল ইসলাম ও মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) মো. রাশেদুজ্জামান।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ‘একাত্তরের গণহত্যা’ শীর্ষক সেমিনারের ওপর আলোচনায় অংশ নেন এবং কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল) আরিফা রহমান রুমা এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ইমরান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে ঐদিনে এবং পরবর্তী নয় মাসে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সকলের প্রতি আহবান জানান ।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বর্বরোচিত গণহত্যার পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আরিফা রহমান রুমা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ও পরবর্তী নয় মাসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি পাক হানাদার বাহিনীর এই নিষ্ঠুর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। কর্মসূচি পরিচালনা করেন ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিলটন।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট, নিউইয়র্ক
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদার সভাপতিত্বে এ বিশেষ দিবসটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কনসাল জেনারেল তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাত্রে ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিহাসের যে নৃশংসতম ও বর্বরতম হত্যাকান্ড অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ২৫ মার্চের কালরাতে নিরীহ, নিরস্ত্র, শান্তিকামী সাধারণ মানুষের উপড় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক ন্যাক্কারজনক অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।
২৫ মার্চ কালরাতসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ হয়।