বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

পবিত্র ঈদুল ফিতর: ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’

আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩০

আজ ২৯ রমজান। সন্ধ্যায় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা দিলে আগামীকাল পালিত হইবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনের পর মুসলিম জীবনে অনাবিল আনন্দের ফল্গুধারা বহিয়া আনে এই ঈদ। আরবি শব্দ ‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ। ‘ফিতর’ অর্থ ভাঙিয়া ফেলা। যেইহেতু এক মাস রোজা রাখিবার পর এই দিন রোজা ভঙ্গ করা হয় এবং খাওয়াদাওয়ার অনুমতি মিলে, তাই এই খুশির দিনকে বলা হয় ঈদুল ফিতর। ইহা রোজাদার মুমিন-মুসলমানের জন্য পরম আনন্দের দিন। কেননা রোজা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির কারণে তাহাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয় বলিয়া আজিকার দিনকে পুরস্কার দিবস বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। মহানবি (স.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি জাতিরই আনন্দ-উত্সব রহিয়াছে, আমাদের আনন্দ-উত্সব হইতেছে এই ঈদ’ (সহিহ্ বুখারি ও মুসলিম)। তাই এই দিনের অন্তর্নিহিত তাত্পর্য অপরিসীম।

মুসলিম জাতির ধর্মীয় আনন্দোত্সব ঈদ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের দিক হইতে অনন্য ও ভিন্ন প্রকৃতির। এক মাসের সিয়াম সাধনার পর মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তিতে পরিণত হইবার আনন্দ আসলে অতুলনীয়। এই আনন্দের আতিশয্যে তাহারা সর্বোত্তম পোশাক-আশাক পরিয়া পূতপবিত্র হইয়া সাদকাতুল ফিতর বিতরণ ও বিভেদ-বিসংবাদ ভুলিয়া পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করিতে করিতে ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত হন। ইহার পর মহান প্রভুর নিকট শুকরিয়াস্বরূপ আদায় করেন দুই রাকায়াত ওয়াজিব নামাজ। আধ্যাত্মিক ও আত্মিক আনন্দই ঈদের প্রধান অনুষজ্ঞ বলিয়া এই উত্সব-আমেজে আনন্দ প্রকাশে কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা-কদর্যতা-অশ্লীলতা-অপব্যয় ইত্যাদির অবকাশ নাই। এই জন্য মুসলমানদের ঈদ নিছক কোনো উত্সব নহে বরং ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।

বিশিষ্ট ওলিয়ে কামেল খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) বলিয়াছেন যে, ঈদুল ফিতর দ্বারা উদ্দেশ্য হইল, রমজান মাসের রোজার মাধ্যমে রোজাদারের মনের কুপ্রবৃত্তিগুলিকে ভাঙিয়া চুরমার করিয়া কাল্বকে আল্লাহর আসন হিসাবে গড়িয়া তুলিবার আনন্দ উপভোগ ও উদ্যাপন করা। ঈদুল ফিতরের দিন গরিব-মিসকিন ও অভাবী লোকের মধ্যে শরিয়ত-নির্ধারিত ও বাধ্যতামূলক যে সাদকাতুল ফিতর বিতরণ করা হয়, তাহা যেমন একদিকে রোজার কাফ্ফারা, তেমনি তাহার কারণে ঈদের দিনে অভাবী ব্যক্তিরাও ঈদের আনন্দে শামিল হইতে পারেন। ঈদ তাই সামাজিক ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নবি করিম (স.) মক্কা হইতে মদিনায় হিজরত করিয়া দেখিতে পান যে, মদিনাবাসী জাঁকজমকের সহিত বত্সরে দুইটি উত্সব (নওরোজ ও মেহেরজান) পালন করিতেছে এবং এই উত্সব দুইটিতে তাহারা নানা রকম উদ্ভট খেল-তামাশা করিতেছে। তাহার পর মহানবি (স.) মুসলমানদের জন্য এই দুইটি উত্সবের পরিবর্তে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা নামক দুইটি পবিত্র উত্সব প্রবর্তন করেন যাহা ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণমূলক এক পবিত্র ও নিষ্কলুষ মহোত্সব।

চাঁদ রাত্রিতে দোয়া কবুল হয় বলিয়া এই রাত্রিতে ইবাদতের গুরুত্বও অনেক বেশি। তাই এই রাত্রিতে অযথা সময় নষ্ট করা অনুচিত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে, দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) ঈদুল ফিতরের দিন খুব কান্নাকাটি করিতেন এবং খাবারও খুব কম গ্রহণ করিতেন। এই দিন হজরত আলি (রা.)কে দেখা গিয়াছে কেবল শুকনা রুটি ভক্ষণ করিতে। কেননা তাহারা তাহাদের রোজা কবুল করা হইয়াছে কি না—এই আশঙ্কায় আল্লাহর নিকট আরো রোনাজারি করিতেন। এই জন্য বলা হয়, এক মাস মাহে রমজান পাইয়াও যাহারা তাহাদের গুনাহখাতা মাফ করিয়া লইতে পারিল না, তাহাদের চাইতে হতভাগ্য আর কেহ নাই। আর যাহারা তাহা পারিল এবং মনে প্রশান্তি লাভ করিল, ঈদের আনন্দ তাহাদের নিকট বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো। ইহাই মুসলিমদের ঈদ আনন্দের স্বরূপ।

অতএব, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমরা মহান আল্লাহর মহাত্ম্য ও প্রশংসাসূচক তাকবির ধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত করিয়া তুলিব। সকলের সহিত শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলিব :তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা। অর্থাত্ আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ হইতে আজিকার আনন্দকে কবুল করুন। পরিশেষে আমরা সকলকে জানাই ঈদুল ফিতরের অনাবিল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আমরা সকলের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করি।

ইত্তেফাক/এমএএম