মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে আছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আবদুর রশিদ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল আলম। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক তার অবৈধ নিয়োগকে বৈধ করতে বিদ্যালয়ের অভিভাবকের অজান্তে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে গোপনেই নির্বাচিত করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। যাদেরকে সহযোগিতা করেছেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও প্রিজাইডিং অফিসার মো. নূর নবী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আবদুর রশিদ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে পদের বিপরীতে ২৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ২৭ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হলে পটুয়াখালীর সরকারি জুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাইকোর্ট আদেশ আছে বিধায় পরীক্ষা হবে না মর্মে ঘোষণা করেন। এরপর অধিকাংশ প্রার্থী চলে যাওয়ার পরে ২৭ জনের পরিবর্তে মো. খায়রুল আলমের ভাড়া করা মাত্র ৫ জন প্রার্থীকে উপস্থিত দেখিয়ে সকাল ১১টায় নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এদিন বিকালে মো. খায়রুল আলমকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও সরকারি জুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করেন এ নিয়োগ কার্যক্রম।
অবৈধ এ নিয়োগ বাতিল চেয়ে ৮ জন আবেদনকারী ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপ-পরিচালক (বরিশাল) এর তদন্তে নিয়োগে অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ নির্দেশ পালন না করে প্রধান শিক্ষককে দিয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এ নির্দেশ স্থগিত করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আদেশটি স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে মহাপরিচালক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট পূর্বের আদেশ স্থগিত করে।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতা চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন, নামে বেনামে ফি আদায় করছেন প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল আলম।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রাজা বলেন, মাউশি ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল আলম তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার দাপটে অবৈধভাবে বিদ্যালয় পরিচালনাসহ যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশ মানছে না সভাপতি। এ আদেশ অমান্য করায় সভাপতির পদ বাতিলের নিয়ম থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল আলম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিছু লোক ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী না থাকায় ভোটগ্রহন হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নুরন্নবি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে কোনো অনিয়ম হয়নি। এমনকি কোনো সংক্ষুব্ধ অভিভাবক এ ব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসার কিংবা রিটার্নিং অফিসারের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অবৈধভাবে গঠন করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। দুটি বিষয়েই সংশ্লিষ্টদের লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।