বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

পিকুর বাগানে হলদে ফড়িং

আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, ০৪:৪৩

ছোট্ট প্রজাপতির খিদে পেয়েছে। মা বললো, একটু অপেক্ষা করো। খাবার আনছি। বলেই, মা প্রজাপতি পাখনা মেলে। এদিক ওদিক ঘোরে, না আশেপাশে কোনো ফুলের গাছ নেই। সব বড় বড় শুকনো গাছ। তাতে আবার ধুলোয় ভরা। একটাও ফুল নেই। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে বসে এক পাতাবাহার গাছের ওপর। এক ভ্রমর উড়ে বসল পাশে। 

কি, ফুলের গাছ খুঁজছো? আমিও সকাল থেকে ঘুরছি মধুর জন্য। কিন্তু ফুল পাচ্ছি না। অনেক খিদে পেয়েছে। প্রজাপতি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। দাদি-নানির কাছে কত গল্প শুনেছি, আগে নাকি সব বাড়িতেই নানা ধরনের ফুলের গাছ থাকত। সবাই গাছ লাগাত। ফুল ফোটাত। কারো খাবারের কোনো কষ্টই হতো না। পেট ভরে মধু খেতো সবাই। আর আজ দেখ ! মানুষরা এখন তেমন কোনো ফুলের গাছই লাগায় না। যা-ও বা লাগায় তাতে যে ফুল হয় তা দিয়ে আমাদের সবার পেট ভরে না। অল্প করে খেতে হয় আমাদের। ভ্রমর চুপ করে শোনে ওর কথা।

এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে আসে এক হলদে ফড়িং। খুব বিরক্ত সে। বসেই পাখা দুটো নাড়াতে থাকে। ভ্রমর তাকায় ওর দিকে, কী হয়েছে? হলদে ফড়িং ঠোঁট উলটায়, কী আবার হবে? ওই ছাদে এক লোক মাটির বড় হাঁড়িতে পদ্ম ফুলের গাছ লাগিয়েছে। অনেক পদ্মও ফুটেছে তাতে। আমি ভাবলাম, যাই একটু ফুলের মধু খেয়ে আসি। যেই না বসেছি। অমনি কতগুলো মানুষ আমাকে ধরতে এল। দ্রুত পালাতে যেয়ে পাখায় একটু ব্যথা পেয়েছি। এখন উড়তে খুব কষ্ট হচ্ছে। খাবার তো পেলামই না। উল্টো ব্যথা পেলাম। ছয় পা ছড়িয়ে বসে ও।

আহা রে, বলে ওর পাখায় আস্তে করে আদর করে দেয় প্রজাপতি। বেশি নড়াচড়া কোরো না। বিশ্রাম নাও। ভ্রমর বলে, আচ্ছা তোমরা বসো। আমি একটু ধানমন্ডির দিকে যাই। দেখি ওখানে কোনো ফুলের বাগান পাই কি না। অনেক খিদে পেয়েছে। বলেই উড়াল দেয় সে। প্রজাপতি পাখা নাড়ে। ফড়িংকে বলে, তুমি বসে বিশ্রাম নাও। আমিও যাই ফুলের খোঁজে। মেয়েটাকে বলেছি, খাবার আনছি। এখনো কোনো মধু পাইনি। কী যে করি, মুখটা মলিন করে পাখা মেলে ও। হলদে ফড়িং চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুক্ষ শহরের দিকে তাকায়। শুধু গাড়ি আর বাড়ি। মাঝে মাঝে সবুজ বড় গাছ।

হঠাৎ চোখ পড়ে দূরে সাদা বাড়ির এক ছাদের দিকে। লাল অনেক ফুল ঝুলে আছে নিচে। দ্রুত শুঁড় নাড়ায় ও। যাক, ফুল পাওয়া  গেছে। উড়তে থাকে ও। ছাদে যেয়ে হলদে ফড়িং তো অবাক! সারা ছাদ জুড়ে শুধুই ফুলের গাছ। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি থোকা থোকা কী সুন্দর সব ফুল। সব মধুতে ভরা। ওমা, এক চৌবাচ্চাও আছে সেখানে। আর তাতে ফুটে আছে সাদা, নীল কত পদ্ম। ফড়িং খুশিতে ওর ৬টা পা নাচায়। ও উড়ে যেয়ে বসে নীল পদ্মের ওপর। আহা কী মিষ্টি মধু। প্রাণ জুড়িয়ে যায় ওর। পেটটা ভরে ও মধু খায়।

হঠাৎ খেয়াল করে, ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা চুলের এক মেয়ে। ভয়ে ওর পাখা শক্ত হয়ে যায়। পিছনে তাকায়, আরেকটি মেয়ে। পালাবে ভাবছে, এমন সময় শোনে লম্বা চুলের মেয়েটি বলছে, ফিয়োনা নড়ো না! নড়ো না। তাহলে ফড়িংটা ভয়ে পালিয়ে যাবে। দেখ কী সুন্দর করে মধু খাচ্ছে ও। চলো ছবি তুলে রাখি। শুনে আহলাদিত হয় হলদে ফড়িং। ও ধরবে না! ছবি তুলবে! ইশ! আজ একটু সেজেগুজে আসলেই হতো। শুঁড় দুটো নাড়ায় ও। হঠাৎ হাসির শব্দ। চমকে তাকায় ফড়িং। চশমা পরা এক মেয়ে হাসছে, বলছে, পিকু, তোমার বাগান আজ সার্থক। দেখো কী সুন্দর এক হলুদ ফড়িং এসেছে!

পিকু হাসে। সত্যিই অ্যানি, আমি কিন্তু প্রজাপতি, ফড়িং, পাখির জন্যই ফুলের বাগান করেছি। ওরা বাগানে ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু খাবে, উড়বে, কত সুন্দর এক দৃশ্য ভাবো একবার। ভাগ্যিস আজ এই ফড়িংটা এসেছে। কী যে ভালো লাগছে। আরো ফুলের গাছ লাগাব ভাবছি। শুনে অবাক হলদে ফড়িং। মনে মনে বলে, এই পিকু মেয়েটা তো ভারি ভালো। ওদের জন্য ফুলের বাগান করেছে! আরো গাছ লাগাবে। ইশ! সবাই যদি ওর মতো হতো। পিকু আস্তে আস্তে ওর পাশে যায়। পদ্মপাতাগুলো ঠিক করে দেয়। ফড়িংয়ের এখন একটুও ভয় করে না। ও ভালোবেসে পিকুর হাতের ওপর গিয়ে বসে। তারপর আবার উড়ে গিয়ে বসে সাদা পদ্মের ওপর। ফিয়োনা বলে, মা, দেখ, ফড়িংটা না তোমাকে একটু ভয় পাচ্ছে না।

হুম, তাই তো। পিকু হাসে। ও আমাদের বন্ধু ভেবেছে। মা’র কথা শুনে ফিয়োনা হাসে। ওদের সাথে হাসে হলদে ফড়িংও। হঠাৎ হলদে ফড়িংয়ের মনে পড়ে প্রজাপতি আর ভ্রমরের কথা। নাহ! একা খাওয়া ঠিক হচ্ছে না। যাই ওদেরও ডেকে নিয়ে আসি পিকুর এই ফুলবাগানে। বলেই স্বচ্ছ পাখা দুটো মেলে ও। যাওয়ার সময় পিকুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে হলদে ফড়িং। সাদা পদ্ম, নীল পদ্ম তখন বাতাসে দোল খায়।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন