শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

রাবিতে শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ বলে পেটানোর অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, ২১:২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তায় ছাত্রলীগ হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাসকে ‘ছাত্রশিবির’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঐ শিক্ষার্থীকে মারধরের পর হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাস গত বৃহস্পতিবার রাতে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি হলে উঠেন। নিরাপত্তার অভাবে তিনি ইতিমধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। হল প্রশাসন দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অভিযুক্তরা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও তার সহযোগী ৮-১০ ছাত্রলীগ কর্মী। তারা সকলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী। 

তবে অভিযুক্ত আতিকের দাবি, সবুজ বিশ্বাস হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের অনুসারী। নিয়াজ ও তার অনুসারীরা তার (আতিক) কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাস উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমানসহ ৮-১০ জন অনুসারী তাকে কক্ষ থেকে বের করে হলের ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন এবং ‘ছাত্রশিবির’ বলে হত্যার হুমকি দেন। পরে নিজেকে সনাতনী দাবি করলে আরও বেশি মারধর করেন। তিনি প্রাণ রক্ষায় দৌড়ে হল ত্যাগ করেন। এ অবস্থায় নিজের নিরাপত্তার অভাবে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।’

ভুক্তভোগী সবুজ বিশ্বাস জানান, অভিযুক্তরা ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে তাকে পিটিয়ে হল ত্যাগে বাধ্য করেন। মারধরের কারণে তার পায়ের বিভিন্ন অংশ ফোলা ও ফাটা জখম হয়েছে। ‘ছাত্রশিবির’ বলে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ঘটনা শুনে পরিবারের লোকজন ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে যেতে বলেছেন। ক্যাম্পাসে থাকাও তার জন্য নিরাপদ নয়। এ জন্য তিনি বাড়িতে চলে গেছেন। প্রশাসন যত দিন তাকে নিরাপত্তা দিতে না পারবেন, তত দিন ক্যাম্পাসে ফিরবেন না।

আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও হলে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এক বড় ভাই আমাকে হলে তুলে দেন। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।’

এ বিষয়ে সবুজের রুমমেট মিনহাজুল ইসলাম জানান, ঘটনার রাত ২টার দিকে আতিক ভাইসহ কয়েকজন সবুজকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তাকে মসজিদের ছাদের ওপরে নিয়ে মারধর করেন। এর আগে একবার আতিক ভাইয়েরা আমাদের রুমে এসেছিল। তখন তাকে চিনতে না পেরে সবুজ একটু খারাপ ব্যবহার করেছিল। এর জেরে সবুজকে মারতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান দাবি করেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি তাকে চিনিই না। মূলত নিয়াজের অপকর্ম লুকানো ও ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে। 

তবে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ আতিকের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ‘সবুজ বিশ্বাস আমার কর্মী নন। তিনি অন্য এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে হলে উঠেছেন। সবুজের সঙ্গে কথা বললে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।

উল্লেখ্য, অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হল ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের সমর্থকরা অংশ নেয়। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিবের অনুসারীদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হয়ে হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী আতিকুর রহমান গত বুধবার হল প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন, সংঘর্ষ চলাকালে নিয়াজ মোর্শেদ ও তার অনুসারীরা তার কক্ষ ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। আতিকের দাবি, ভাঙচুরের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিয়াজ এই অভিযোগ করিয়েছেন। যদিও নিয়াজ আতিকের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সোহরাওয়ার্দী হলের ঘটনা জানার পর উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। লিখিত অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। সবুজ বিশ্বাস ঐ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নন। আবাসিকতা ছাড়া হলে থাকার প্রশ্নই আসে না। ঘটনা দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, প্রক্টর অফিসে কোনো অভিযোগ আসেনি। এ ব্যাপারে হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।

ইত্তেফাক/পিও