ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী, জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয়ে থাকে। কোরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবানরা যদি কোরবানি না করে, হাদিসে তার নিন্দা জানানো হয়েছে। তবে কোরবানির আগে তথা জিলহজ মাসের আগে বা শুরুতে কয়েকটি কাজ থেকে বিরত থাকা সুন্নত ও মোস্তাহাব আমল।
এর মধ্যে চুল, নখ, বগল-নাভির পশম, গোঁফ ইত্যাদি আগেই কেটে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে, যারা কোরবানি করার সংকল্প করেছেন। তবে নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা, মেহেদি দেওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, স্ত্রীসম্ভোগ করা নিষিদ্ধ নয়। এ বিধান শুধু কোরবানিকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যাকে কোরবানির পশু জবাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়।
তাদের উদ্দেশ্য করে মহানবি (স.) বলেছেন :যে ব্যক্তি কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করেছেন, সে যেন জিলহজ মাসের নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার চুল, নখ না কাটে (মুসলিম : ৪৯৫৯, আবু দাউদ :২৭৮২)।
এ সময় যে কাজগুলো করা জরুরি :১. মাথার চুল কাটা কিংবা মাথা ন্যাড়া করা, ২. হাত ও পায়ের নখ কাটা, ৩. মোচ ছেঁটে ছোট করে নেওয়া, ৪. শরীরের অন্যান্য অযাচিত পশম (নাভি ও বগলের নিচের) কাটা কিংবা পশম বিলুপ্তকারী ওষুধ ব্যবহার করা। যারা কোরবানি করতে সক্ষম নয়, তারাও এই আমল করতে পারবেন। কোনো অসচ্ছল ব্যক্তি যদি এই দিনগুলোতে চুল, নখ না কেটে ঈদের দিন কাটেন, তাহলে তাদের কোরবানি দেওয়ার সওয়াব দেওয়া হবে। তবে যারা কোরবানি করবেন না, তাদেরকে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে নিষেধ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে শাইখ বিন বায (রহ.) বলেন, আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, তারা চুল কাটা ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। হুকুমটি কোরবানিকারীর জন্য খাস, যিনি তার সম্পদ থেকে কোরবানির পশুটি ক্রয় করেছেন। (ফতোয়ায়ে ইসলামিয়া :২/৩১৬)
এ হুকুমের ক্ষেত্রে নর-নারীর মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। তাই কোনো নারী বিবাহিত হন কিংবা অবিবাহিত হন, তিনি যদি কোরবানি করতে চান, তাহলে তার শরীরের চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবেন। হাদিসের ভাষায়—কেউ যদি জবাই করার জন্য কোনো পশু প্রস্তুত রাখেন এবং তিনি জিলহজ মাসে প্রবেশ করেন, তখন তিনি যেন তার চুল ও নখ না কাটেন, যতক্ষণ না তিনি কোরবানি সম্পন্ন করেন। এক্ষেত্রে তিনি নিজ হাতে জবাই করুন কিংবা অন্য কাউকে জবাই করার দায়িত্ব দিন, উভয়টা সমান।
লেখক :ইসলামি গবেষক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান,
জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি