বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

লবণাক্ততায় পানির উৎপাদন কমেছে, চট্টগ্রামে পানির সংকট

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০

গ্রীষ্ম শুরুর আগেই হালদা নদীতে নোনা পানি ঢুকে পড়েছে। নদীতে জোয়ারের সময় শোধনাগারের জন্য পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে ওয়াসার মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগারে প্রায় ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কমে গেছে। নগরীর কিছু এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে, গ্রীষ্ম মৌসুমে বিকল্প স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য একটি পানি শোধনাগার প্রকল্প নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ওয়াসা। দৈনিক ৬৩ কোটি লিটারের পানি পরিশোধনাগার বানাতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা।

ওয়াসা বর্তমানে দৈনিক ৪৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। সম্প্রতি জোয়ারের সময় হালদায় লবণ পানি ঢুকে পড়ছে। হালদা থেকে মদুনাঘাট ও মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য পানি সংগ্রহ করা হয়। এতে হালদায় ভাটার সময় পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে এই দুই শোধনাগার থেকে দৈনিক প্রায় ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কম হচ্ছে। ওয়াসার তথ্য মতে গতকাল ওয়াসা নগরীতে ৪৩ কোটি ৫৮ লাখ লিটার পানি সরবরাহ দিয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে কাপ্তাই হ্রদের উজানে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে সেখান থেকে পানি ছাড়া হয় তুলনামূলক কম। সেই স্বল্প পানি বিপরীতমুখী সাগরের পানিকে জোরালো বাধা দিতে পারে না। ফলে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ সাগরের নোনা পানি ঢুকে পড়ে হালদা নদীতে।

এই তীব্র লবণাক্ততার কারণে জোয়ারের সময় মদুনাঘাট ও মোহরা শোধনাগারের জন্য হালদা নদী থেকে পানি নেওয়া বন্ধ রাখতে হয় চট্টগ্রাম ওয়াসাকে। এতে পানির উৎপাদন কমে যায়। তখন চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

শুষ্ক মৌসুমের সংকট কাটাতে এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা মাথায় রেখে নতুন একটি  প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। চট্টগ্রাম ওয়াসা বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদীর তীর সংলগ্ন ভান্ডালজুড়ি এলাকায় ৬৩ কোটি লিটারের পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ করতে চায়। ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান নতুন এই প্রকল্পের জন্য কর্ণফুলী নদীর উজানে কর্ণফুলি পেপার মিল এলাকায় পানির প্রবাহ সব সময় ভালো থাকে। সেখান থেকে পানি নিতে চায় ওয়াসা। ইনটেক থেকে মোহরার পরিশোধনাগারের নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত পানি আনা হবে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির নাম ‘লবণাক্ততা পরিহারের লক্ষ্যে মোহরা পানি শোধনাগারের ইনটেক স্থানান্তর এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০৪২ সালে গিয়েও নগরীতে পানির বর্ধিত চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘এই প্রকল্পে বিনিয়োগে এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক প্রস্তাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চায় কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। তারা সম্ভাব্যতা যাচাই করে সম্ভাব্য ইনটেক (পানি তোলার স্থান) নির্ধারণ করবে।’

২০২৯ সালে এই প্রকল্প শেষ করতে চেয়েছিল ওয়াসা। তবে এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়নি। চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে নগরীতে পানির দৈনিক চাহিদা ৫৮ কোটি লিটার। ২০৩২ সালে চট্টগ্রামে পানির দৈনিক চাহিদা ৭৫ কোটি লিটার ছাড়িয়ে যাবে। ২০৪২ সালে চাহিদা হবে ১০০ কোটি লিটারের বেশি।

এছাড়া পানির সংকট মেটাতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৫টি গভীর নলকূপ বসাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

এই প্রকল্পের পরিচালক চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরী বলেন, ‘মোহরা কালুরঘাটসহ যেসব স্থানে পানির লেয়ার ভালো এবং যেসব এলাকায় পানির সংকট আছে, সেসব এলাকায় গভীর নলকূপগুলো বসানো হবে।’

ইত্তেফাক/এমএএম
 
unib