বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

শিশুদের স্বপ্ন ও শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:০২

একটি শহর বা নগরের বসবাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এবং নগর পরিকল্পনা অপরিহার্য। আর এই পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে শিশুদের প্রাণবন্ত ভাবনা, ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথা শোনা জরুরি, কারণ আগামী দিনে তারাই হয়ে উঠবে নগরগঠনের কারিগর। নগরের বাসিন্দা হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, সেটিও তারা উপলব্ধি করবে এমন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে। এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর বিনির্মাণের বার্তা নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো ‘শিশুবান্ধব ঢাকার পথে যাত্রা’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। রাজধানীর লালমাটিয়ায় ‘গ্যালারি দ্য ইল্যুশন’-এ গেল ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।  

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘রায়েরবাজার টু গ্রো আপ ইন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ থেকে ১৮ বছরবয়সী ২৪০ জন শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নের রায়েরবাজার কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছে। সেসব ভাবনাই নগর বিনির্মাণের রূপরেখা আকারে প্রদর্শন করা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে।

শহর নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানাচ্ছে এক শিশু শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের চিহ্নিত করা বিভিন্ন সমস্যা ও ভাবনায় উঠে এসেছে যে, রায়েরবাজারে বসবাসরত শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই বাইরে খেলতে যেতে পারে না। নিরাপদ মাঠ ও পার্কের অভাব, সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা, হয়রানি এবং কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত—এসব সমস্যা তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা পথচারীবান্ধব রাস্তা, সকলের জন্য উন্মুক্ত খেলার জায়গা এবং মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির দাবি জানিয়েছে। যেমন কচিকণ্ঠ হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা বিনতে হাই বলেছে, এলাকার কোনো খোলা জায়গায় শুধু ছেলেরা খেলতে পারে। কিন্তু মেয়েদের জন্য খেলার কোনো জায়গা নেই। যদি নিরাপদ মাঠ থাকতো, তাহলে আমরা সবাই নিশ্চিন্তে খেলতে পারতাম।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রদর্শনীর এক পর্যায়ে একটি আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এতে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব জিওগ্রাফি অ্যান্ড প্ল্যানিং-এর অধ্যাপক ড. মাতলুবা খান। আলোচনায় যুক্ত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি ড. মোহাম্মদ রাশেদ ভূঁইয়া, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের সদস্য মারুফ হোসেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুননেসা, আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, লরেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উপাধ্যক্ষ শিশির মন্ডল, কচিকণ্ঠ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম।

ড. মাতলুবা খান বলেন, আমার জানতে পেরেছি, এক-তৃতীয়াংশ শিশু একেবারেই বাইরে খেলতে যায় না। সড়ক দুর্ঘটনা, হয়রানির আশঙ্কা, উন্মুক্ত স্থানে নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং অসামাজিক কার্যকলাপের প্রবণতা শিশুদেরকে বাইরে খেলতে বাধা দেয়।

প্রদর্শনীতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, শুধু দালান নির্মাণ করলেই শহর বাসযোগ্য হয় না, নিরাপদ খেলার জায়গা, হাঁটার পথ, স্বাস্থ্যকর খাবারের স্থান—এসব নিশ্চিত করতে হবে। শিশুরা যদি নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তাহলে সেটি পরোক্ষভাবে গোটা সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।

স্থপতি ড. রাশেদ ভূঁইয়া, পরিবেশকর্মী আমিনুল ইসলাম সুজন এবং মারুফ হোসেন বলেন, একটি শহর শিশুবান্ধব করার অর্থ সে শহর সবার জন্য নিরাপদ হবে। যেখানে নারী-বৃদ্ধ সকলেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে প্রথমে মানুষ, স্থান এবং পরে অবকাঠামোর কথা ভাবা উচিৎ। তথাকথিত উন্নয়নের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শহরের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিশুদের অংশগ্রহণ শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, অপরিহার্যও। একটি সুন্দর ও নিরাপদ নগর গড়তে হলে শিশুদের কথা শোনা এবং তাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তব রূপ দেওয়ার এখনই সময়।

ইত্তেফাক/এসএএস
 
unib