সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অনেকে ছোটবেলা থেকেই জীবিকার তাগিদে কাজ করতে বাধ্য হয়। তাদের কেউ কেউ পরিচয়হীন, কেউ আবার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনা করা যেন একপ্রকার বিলাসিতা। অন্তত নিজেদের চোখের সামনে এই বাস্তবতা বদলাতে ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের একদল তরুণ একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। মোহন, সৌভাগ্য, স্বরূপ ও আব্বাসসহ কয়েকজন বন্ধু মিলে এমন শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষাদানের পরিকল্পনা করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সংগঠক ও শিক্ষক জাহেদুল আলম। পরে তারা চট্টগ্রামের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে 'স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন' নামে একটি স্কুল গড়ে তোলেন।
তবে স্কুল পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। তাই তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে স্বল্প পরিমাণে টাকা জমাতে শুরু করেন। পরে, ২০১৭ সালে জাহেদুল আলম তার বন্ধু সৌরভ চৌধুরী, জন মোহাম্মদ, রঞ্জন সাহা, সানি চৌধুরী, শিউলি, উর্মি বড়ুয়াসহ আরো কয়েকজন তরুণকে নিয়ে 'অগ্নিবীণা পাঠাগার' নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। । ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে টিনশেড কাঠামোর একটি ছোট্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা 'স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন' নামে পথচলা শুরু করে। শিক্ষক জাহেদুল আলম বলেন, 'আমরা বন্ধুরা মিলে নিজেদের অর্থায়নে স্কুলটি গড়ে তুলেছি। শুরুতে ৩০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে পড়ানো হতো, কিন্তু এখন এখানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলটিতে বর্তমানে ৬ জন স্বল্প-বেতনভুক্ত শিক্ষক শিক্ষাদান করছেন।'
সৌরভ চৌধুরী বলেন, 'আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী স্কুল চেয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সাধারণ, মাদ্রাসা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার নামে বিভক্ত, যা শিশুদের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতায় বড় করে। আমরা চাই সবার জন্য একটি সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা ও বিভিন্ন উৎসব উদ্যাপন করা হয়। ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষাসামগ্রী, খেলাধুলার সরঞ্জাম, চিকিৎসা সেবা ও দুপুরে 'মিড-ডে মিল' দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে 'অগ্নিবীণা পাঠাগার'-এর সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানে স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয়রাও এই উদ্যোগে খুশি এবং বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
সংগঠকদের স্বপ্ন, 'স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন' যেন একটি টেকসই প্রতিষ্ঠান হয়ে গড়ে ওঠে। শিশুরা এখানে পড়বে, খেলবে, হাসবে এবং বেড়ে উঠবে এক সুন্দর ভবিষ্যতের পথে