বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সালাত আদায়ে গাফিলতি কাম্য নয় 

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০০

সব প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তিনি আমাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দিয়ে আমাদের প্রতি রহম করেছেন। প্রকৃতপক্ষে পাঁচওয়াক্ত সালাত হলো শাহাদাতইনের পর ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। নবি (স.)-এর বাণী অনুযায়ী ইসলাম হলো এ কথা স্বাক্ষ্য দেওয়া যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসুল। সালাতের মধ্যে ইমানের এই রুকনগুলো বিদ্যমান। তাই সালাত হলো সেই স্বম্ভ-যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, বিষয়ের মস্তক হচ্ছে ইসলাম আর স্তম্ভ হচ্ছে সালাত এবং তার উচ্চত্তম চূড়া হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।

এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, 'অতঃপর যখন নিশ্চিত হবে, তখন সালাত কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।' এই নির্দিষ্ট সময়গুলো আল্লাহ-তায়ালার বক্তব্যের সঙ্গে সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের কুরআন (বনি ইসরাইল-৭৮)।

তিনটি নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ করেছেন-সূর্য হেলে পড়ার সময় অর্থাৎ জোহর ও আসর আর রাতের অন্ধকার পর্যন্ত হচ্ছে মাগরিব ও এশা এবং ফজরের সালাত হচ্ছে ফজরের কুরআন। ফজরের সালাতে দীর্ঘ তিলাওয়াত করার কারণে এটি কুরআন দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। নিশ্চয় ফজরের কুরআন ফেরেশতাদের উপস্থিতির সময়, অর্থাৎ এই সময় দিন ও রাতের মানবজাতির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ফেরেশতারা উপস্থিত থাকেন। আসর ও ফজরে সালাতের সময় তারা উপস্থিত হন তাদের দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তরের জন্য। এজন্য এ দুটি সালাত হচ্ছে পাঁচওয়াক্ত সালাতের মধ্যে সর্বোত্তম সালাত। এজন্যই বলা হয়েছে-তোমরা সব সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতে (বাকারা-২৩৮); যেমনটি সহিহ হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে এটি আসরের সালাত বলে (বুখারি-৫৩)।

সালাতের গুরুত্ব কেন এত বেশি? কারণ সালাত রুহ-হৃদয়কে আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত করে যদি সালাত একাগ্রতা ও মনোযোগের সঙ্গে আদায় করা হয়। সালাতের অর্থ এই নয় যে, শুধু দাঁড়ানো বা রুকু করা বা সেজদা করা। এরূপ হলে তা এমন একটি হৃদয় যেটা গাফেল এবং অমনোযোগী, যা কোনো উপকারে আসবে না। মনে রাখতে হবে সালাত মানে হচ্ছে বান্দা ও তার রবের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। তার হৃদয়কে মনোযোগী থাকতে হবে, এজন্য সে রবের কাছে প্রার্থনা করছে এবং সে যা তিলাওয়াত করে, সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে। তাহলে এই প্রার্থনা থেকে বান্দা উপকৃত হবে। শুধু শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা এবং রুকু ও সেজদা করা সেটা বাহ্যিক বিষয়। শুধু এরূপ প্রার্থনা আল্লাহর কাছে যেন তার পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে না। কারণ আল্লাহ বলেছেন-হে ইমানদারগণ, তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও (বাকারা-৪৫-৪৬) আর যারা তাদের সালাতের প্রতি গাফিলতি করে, আল্লাহ তাদের মোনাফিক বলে ধিক্কার জানিয়েছেন (সুরা মাউন-৪)। আল্লাহ তাদের কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন, যদিও তারা প্রার্থনা করেছিল; যেহেতু তারা সালাত কায়েম করেনি।

ফরজ সালাতের পাশাপাশি অন্য সালাতগুলো হচ্ছে সুন্নাহ ও নফল, যা ফরজ সালাতের ঘাটতি পূরণ করে। অন্যটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত। আল্লাহ আমাদের যথা নিয়মে সালাত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক (রাজউক) ও ইসলামি গবেষক

ইত্তেফাক/এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন