ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন সুকান্ত সাহা। চাঁদপুরের শাহরাস্তির বাসিন্দা নিধির চন্দ্র সাহা ও কনক রাণী সাহা দম্পতির সন্তান সুকান্ত হেঁটেছেন স্রোতের বিপরীতে। সাধারণত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার পর যেখানে প্রচুর নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে কাড়িকাড়ি অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে, সেই পথে না গিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন এক ভিন্ন পথ—জনসেবা। প্রকৌশলী পরিচয়কে আড়ালে ফেলে সিভিল সার্ভিসে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ছেন তিনি।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সেশনে সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন সুকান্ত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রথমদিক থেকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেন, বিসিএস কর্মকর্তা হবেন। কারণ, সিভিল সার্ভিসে থাকে বৈচিত্র্য ও নানামুখী কাজের সুযোগ। স্নাতক শেষ করার পর প্রথমবার ৩৪তম বিসিএসে অংশ নিয়ে তিনি তথ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ বেতারে। তবে সুকান্ত জানতেন, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ মিলবে প্রশাসন ক্যাডারে। তাই ৩৫তম বিসিএসেও অংশ নেন, সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হন প্রশাসন ক্যাডারে। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার প্রথম পোস্টিং ছিল রাজশাহী বিভাগে। এরপর পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ও মৌলভীবাজারে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠা ও সততার সাথে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগ দেন সুকান্ত সাহা। চব্বিশের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ার পরও তিনি উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন আন্তরিকতার সাথে। এরইমাঝে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অধীনে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় চালু করেছেন জেলা প্রশাসন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শিক্ষার হারের দিক দিয়ে তলানিতে থাকা এই অঞ্চলে সদ্য গড়ে ওঠা এই স্কুলের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক জাগরণ। এক প্রবাসী চিকিৎসক দম্পতির দান করা জমিতে সুকান্তের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে ল্যাবরেটরি স্কুলের নতুন ক্যাম্পাস, যা সাজানো হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও সৃজনশীল স্থাপত্য পরিকল্পনায়। সুকান্ত নিজেও প্রতি সপ্তাহে স্কুলে যাচ্ছেন, বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন শিক্ষা উপকরণ।
ইউএনও সুকান্ত সাহা নিরহংকারী, শান্তিপ্রিয় ও সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দায়িত্ব পালনে মানবিকতা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সেবাগ্রহীতাদের প্রতি সহমর্মিতার কারণে শান্তিগঞ্জের স্থানীয় জনসাধারণের কাছে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেও তিনি ভীষণ প্রিয়। যেকোনো দাপ্তরিক প্রয়োজনে সবাই ছুটে যান তার কাছে, তিনিও সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন।
তরুণ ইউএনও সুকান্তর কাছে প্রশাসন মানে প্রজ্ঞাপন বা নির্দেশ নয়—বরং মানুষের জীবনে আশা ফেরানো, প্রান্তিক এলাকার শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়া, কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো।
অবসর সময়ে বই পড়া আর ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করা এই কর্মকর্তা সবসময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকতে চান। পাশাপাশি পর্যটনের বিকাশে ভূমিকা রাখতে চান তিনি। পড়াশোনা যেকোনো বিষয়েই হোক না কেন—যে তরুণরা সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে মানুষের সেবা করতে চান, সুকান্তরাই হতে পারেন তাদের অনুপ্রেরণা।