পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ায় ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে আটক করা হয়েছে। বিজেপি'র এক যুব নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রোববার (১৮ মে) অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে 'ক্ষতিকর কাজ, সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপের প্ররোচনা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননা'র সঙ্গে সম্পর্কিত ফৌজদারি আইনের ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে এই অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হলো।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, ৪২ বছর বয়সী আলী খানকে রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ৬ মে শুরু হওয়া 'অপারেশন সিন্দুর' সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করেন। ৮ মে এক ফেসবুক পোস্টে ওই অধ্যাপক লিখেছিলেন, 'আমি খুব খুশি যে ডানপন্থীরা ভাষ্যকার কর্নেল সোফিয়া কুরাইশির প্রশংসা করছেন, কিন্তু সম্ভবত তারা (ডানপন্থীরা) একইভাবে জোরে জোরে দাবি করতে পারেন যে, গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার চালানোর শিকার এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার অন্যান্যদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সুরক্ষিত করা হোক।'
অধ্যাপক লেখেন, 'দুই জন নারী কর্মকর্তার বিশ্লেষণের ফলাফল উপস্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ, তবে দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে, অন্যথায় এটি কেবল ভণ্ডামি।'
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এরপর হরিয়ানা নারী কমিশন বলেছে, অধ্যাপকের বক্তব্য 'ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নারী অফিসারদের অবমাননা করেছে এবং সাম্প্রদায়িক বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে'। এরপর তাকে তলব করে ওই কমিশন।
পরে অধ্যাপক বিষয়টি নিয়ে বলেন, 'আমার পুরো মন্তব্যই ছিল নাগরিক এবং সৈন্য উভয়ের জীবন রক্ষা করার বিষয়ে। তাছাড়া, আমার মন্তব্যে এমন কিছু নেই যা নারী-বিদ্বেষী বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।'
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারত সরকারকে 'মুসলিমদের সম্পত্তির অন্যায্য লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস' বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুসলিম সম্পত্তির অবৈধ ধ্বংস, যা রাজনৈতিক নেতা এবং মিডিয়া 'বুলডোজার ন্যায়বিচার' হিসেবে প্রচার করছে - এটি নিষ্ঠুর এবং ভয়াবহ। এই ধরনের স্থানচ্যুতি এবং দখলদারিত্ব গভীরভাবে অন্যায্য, বেআইনি এবং বৈষম্যমূলক। তারা পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে। অবিলম্বে এটি বন্ধ করতে হবে।
এক বিবৃতিতে সংস্থার মহাসচিব বলেন, (ভারতের) কর্তৃপক্ষ বারবার আইনের শাসনকে অবমূল্যায়ন করেছে; ঘৃণা, হয়রানি, সহিংসতা এবং বুলডোজার ব্যবহারের প্রচারণার মাধ্যমে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা উপাসনালয় ধ্বংস করেছে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দ্রুত সমাধান করতে হবে।
যদিও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তথাকথিত 'বুলডোজার বিচার' বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া অবজ্ঞা করে চলছে।
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারক অতি-ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোকে দায়মুক্তির সাথে কাজ করার অনুমতি দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, ভারতের অধ্যাপক এবং শিক্ষাকর্মীরা আলী খান মাহমুদাবাদের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার প্রকাশিত প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের সই করা খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, 'এটা স্পষ্ট যে, অধ্যাপক খান সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত সংযমের প্রশংসা করেছেন, সন্ত্রাসী বা রাষ্ট্র-বহির্ভূত শক্তি এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মধ্যে যে কোনো পার্থক্য এখন কীভাবে ভেঙে পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করেছেন এবং বলেছেন যে, মিডিয়া ডিব্রিফের জন্য নির্বাচিত নারী অফিসারদের দৃষ্টিভঙ্গি 'গুরুত্বপূর্ণ' ছিল।
১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, যার ফলে তাদের সীমান্তে কয়েক দিনের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা বন্ধ হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা