শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অতিমারির তীব্র থাবায় ডেঙ্গুর মরণকামড়

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৫৫

অতিমারির এই মরণ থাবায় নতুন করে যোগ হয়েছে ডেঙ্গু। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। বৈশ্বিক মহামারির এই বিপর্যয়ে পৃথিবী কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতা সামলাতেই পর্যুদস্ত যখন, বাংলাদেশকে একসঙ্গে দুটি জীবননাশী মহারোগকে সামলাতে হচ্ছে ঠিক তখনই। জুলাই মাসে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই প্রতিদিনের রেকর্ড ভেঙেছিল। তার মাঝেই মারাত্মক রূপ নিতে শুরু করেছিল ডেঙ্গু জ্বর। অনেক রোগী একই সঙ্গে ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। আমাদের দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার সময়। প্রতি বছরের মতো এবারেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে হাসপাতালগুলোতে। গড়ে প্রায় ২০০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী রোজই ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। ২০২০ সালে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০৫, আর এ বছর শুধু জুলাই মাসেই এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৬। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রোগীর সংখ্যা, বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। মূলত ঢাকাতেই এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, যার প্রয়োজন মেটাতে ঢাকার চারটি হাসপাতালকে ডেঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৬ হাজার ৯৪৪ জন। শুধু জুলাইতে এই মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজার ১২৮ জন। জুলাইয়ের শেষ দিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা স্বস্তির মুখ দেখলেও বিরাজমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নতুন এক সংকটের মুখোমুখি করেছে বাংলাদেশকে।

বাড়ছে ডেঙ্গু, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করার পরামর্শ

একই সঙ্গে সংক্রমণ ছড়ানো করোনা এবং ডেঙ্গুর প্রাথমিক উপসর্গে কিছুটা মিল রয়েছে, যেমন—জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শরীর ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি। অমিলও রয়েছে অনেক যেমন করোনা হলে স্বাদ এবং গন্ধের অনুভূতি থাকে না, ফুসফুস আক্রান্ত হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ডেঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যের মধ্যে চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে তীব্র ব্যথা (break bone fever), রক্তচাপ কমে যাওয়া। মারাত্মক পর্যায়ে প্লাটিলেট কমে যাওয়া ছাড়াও চোখের কোনা, দাঁত বা মাড়ি থেকেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু এবং কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা জটিল থেকে জটিলতম হতে পারে। একই সঙ্গে ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে এবং ভাস্কুলাইটিস দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে কয়েক গুণ। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর কারণে যদি রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যায় এবং অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-এর নিচে নেমে যায়, তাহলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে। তখন একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে প্লাটিলেট ও অক্সিজেন—দুটোই দিতে হবে। আবার করোনা ভাইরাসে যদি ফুসফুস ও হূদ্যন্ত্রের ধমনি দুটোই মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে রোগীর জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে।

বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, বাড়ছে শঙ্কা | The Daily Star Bangla

রোগের উপসর্গের ক্ষেত্রে কোনোরূপ দ্বন্দ্বের অবকাশ থাকলে একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু—দুটোরই পরীক্ষা করাতে হবে। সময়ের সঙ্গে করোনাও তার রূপের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন কিছু উপসর্গে আবির্ভূত হচ্ছে—এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। করোনা ও ডেঙ্গু—এই দুটি ভাইরাস মানবদেহে দুইভাবে বৃদ্ধি লাভ এবং ক্ষতিসাধন করে। তবে একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্তের ব্যাপারটি বলতে গেলে একেবারেই নতুন। এর সম্পর্কে ব্যাপক জানতে হলে বিশদ আলোচনা ও গবেষণার প্রয়োজন আছে। নতুনত্বের এই অজ্ঞতার সবটুকু মাশুল দিতে গিয়ে বলতে গেলে বাংলাদেশকে একাই যুদ্ধের মাঠে নামতে হয়েছে—একাই চালিয়ে যেতে হচ্ছে অতিমারিকালীন আরো একটি মরণকামড়ের বিরুদ্ধে রণসাজের শক্ত অবস্থান। যতই যা-ই হোক না কেন দিন শেষে জয়ের মালা আমাদেরই হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব, আবাসিক চত্বর শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখব, মশারি দিতে ভুলব না কখনোই। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হব, পরিমিত চিকিৎসা নেব, সুউচ্চ রাখব মনোবল। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, মারি ও মড়কে অটুট থেকেছি। আমরা পরাভূত করব করোনাকেও—ডেঙ্গুকেও। জয় আমাদের হবেই।

লেখিকা: কবি ও কথাশিল্পী, গবেষক, প্রবন্ধকার ও কলামিস্ট

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন