বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

একটি ভবনের গড়া-ভাঙা

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ২১:১০

১৯৯৮ সালে সরকারের নিকট হইতে জমি পাইয়া কাওরান বাজারের হাতিরঝিলে ভবন গড়িয়া তুলিয়াছিল বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ২০০৬ সালের দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু হইতেই ইহার বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। জলাধার আইন লঙ্ঘন করিয়া ভবনটি তোলায় ২০১১ সালে তাহা ভাঙিয়া ফেলার রায় আসে হাইকোর্ট থেকে। রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লে­খ করিয়া রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙিয়া ফেলিতে নির্দেশ দেয় আদালত। ইহার বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যাহা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙিতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাইতেছে। ইহাতে ব্যর্থ হইলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভাঙিয়া ফেলিতে নির্দেশ দেওয়া হইল। পরে ভবন ছাড়িতে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। বারবার পিছাইতে থাকে ভবন ভাঙার তারিখ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বত্সর নূতন করিয়া এক বত্সর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হইবে না; কিন্তু তাহার পরেও আবার সময় চাওয়া হয়।

প্রথমে বলা হইয়াছিল, হাতুড়ি দিয়া পিটাইয়া ভবনটি ভাঙিলে হতাহতের ঝুঁকি থাকে। তাই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙা হইবে। পরে ঐ অবস্থান হইতে সরিয়া আসে রাজউক। জানানো হয়, সনাতন পদ্ধতিতেই ভাঙা হইবে ভবনটি। ভবনটি ভাঙিতে ২ কোটি টাকা খরচ হইবে বলিয়া জানাইয়াছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ১৫ তলা ঐ ভবনের ধ্বংসাবশেষ বিক্রি করিয়া এই অর্থ উঠিয়া আসিবে বলিয়াও ধারণা করিতেছেন তাহারা। তবে ধ্বংসাবশেষ বিক্রির টাকায় খরচ মিটাইতে না পারিলে বিজিএমইএর নিকট হইতে টাকা আদায় করা হইবে বলিয়া জানাইয়াছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) নিকট হইতে জমিটা ক্রয় করিয়াছিল বিজিএমইএ । এই জমি দেওয়ার পিছনে ভুল ছিল সরকারি সংস্থা ইপিবির। বিনিময়ে বিজিএমইএ ইপিবিকে ৫ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করিয়াছিল।

আমাদের প্রশ্ন, অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হইবে জানিয়াও একটি সরকারি সংস্থা হইয়া রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কী করিয়া এই জমি বিক্রয় করে এবং রাজউক সেই জমিতে ভবন তৈরির অনুমোদন প্রদান করে? ভবনটি ভাঙা হইতেছে, তাহা আদালতের আদেশ অনুসারে হইতেই হইবে; কিন্তু প্রশ্ন থাকিয়া যাইবে, ইহা কী করিয়া অনুমোদিত হইয়াছিল? উল্লেখ্য, ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লে­খ রহিয়াছে। প্রশ্ন হইল, যাহারা সরকারপ্রধানকে দিয়া উদ্বোধন করাইয়াছিলেন, তাহারা কি জানিতেন না যে এই ভবন জলাধারে নির্মিত হইতে যাইতেছে?