‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে’

‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড আমার ব্যক্তি জীবনে ও আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে, এটি দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি যেনো আরও দায়বদ্ধ হলাম’-বাংলাদেশের তরুণদের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলার ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জনের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এমনটিই জানালেন সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন স্বপন।
দুর্যোগ মোকাবিলা ও ঝুঁকি হ্রাস ক্যাটাগরিতে এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন। দুর্যোগ প্রতিরোধ ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা, সড়ক নিরাপত্তা, জরুরি উদ্ধার পদ্ধতি, ভূমি ধ্বস , বন্যা ব্যবস্থাপনা, বজ্রপাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমিয়ে আনাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কাজ করে এটি।
তবে কাজ শুরুটা বেশ আগেই। ২০১৫ সালে শুরু হয় তার প্রতিষ্ঠানের পথ চলা। কোন প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি এই পথ চলা। যেনো সমানতালে চলেছে সবকিছু।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়ে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি চলে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। এরমধ্যেই জবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিজাস্টারম্যানেজমেন্ট নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা শেষ করেন তিনি।
তরুণদের কাজকে মূল্যায়ন তাদের কাজের গতি বৃদ্ধি করে এবং দেশ ও সমাজের মানুষের জন্য সেবামূলক বিভিন্ন কাজ করতে তরুণদের আগ্রহ বৃদ্ধি করে এমনটি মনে করেন সাখাওয়াত হোসেন স্বপন। দেশের মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে যেতে যান কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ভুরুঙ্গামারীর বলদিয়া ইউনিয়নের মংলার কুটি গ্রামের এই উদ্যোক্তা।
প্রতিষ্ঠানের বীজবপন যেনো শুরু হয়েছে একটু আগেই, তখন ২০১১ সাল। সাখাওয়াত স্বপন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) প্রোগ্রামের আওতায় ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির পাইলট প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নিতে অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকে তাকে প্রশিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা। এর মধ্যে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পাওয়া মাত্র ফায়ার ফাইটার হিসেবে ছুটে যান স্বপন এবং আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোশাক শ্রমিকের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া খুব কাজ থেকে দেখেছেন তিনি।
পরের বছর ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনা ঘটে। বহুতল এই ভবন ধসে চাপা পড়ে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক এবং ১ হাজার ১৭৫ শ্রমিক মারা যান। সেখানেও বিভিন্ন উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে অংশ নেন তিনি এবং টিম লিডার হিসেবে কাজ করেন সাখাওয়াত হোসেন স্বপন।
আরো পড়ুন: ‘তরুণদের কাজের স্বীকৃতি চলার পথকে আরো বেশি উদ্বেলিত করে’
তবে আস্তে আস্তে গড়ে ওঠা সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশনের পথ চলা মোটেও সহজ ছিলো না। শুরুর দিকটায় অনেক সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয়েছে।
পেছনের এই গল্প নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন। প্রথমে অনেক কষ্ট করে বোঝাতে হয়েছে। সবার সাথে কথা বলতে হয়েছে। যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এসেছে। আমাকে এমনও বলেছে-আপনার কাছ থেকে কেন ট্রেনিং নিবো? আপনি কোথা থেকে নিয়েছেন। তখন ফায়ার সার্ভিসের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে উল্লেখ করতে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস থাকতে আপনি কেন? এমনটি শুনতে হয়েছে।তখনও তাদেরকে নানাভাবে বোঝাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ দুর্যোগকালীন করনীয় বিষয়গুলো জানে না। তাদের যদি হাতে কলমে শেখাতে পারি তাহলে দুর্ঘটনা কমে আসবে এবং দুর্ঘটনার পরবর্তী ক্ষয়-ক্ষতিও কমে আসবে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা পারিশ্রমিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন এই উদ্যোক্তা। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ট্রেনিং করিয়েছেন তিনি।
তরুণদের কাজের স্বীকৃতির এমন একটি প্লাটফর্ম সৃষ্টির জন্য সিআরআই ও ইয়াং বাংলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই স্বীকৃতি দেশের সকল স্থানে কাজের জন্য রাস্তাটিকে আরো সহজ করে দিয়েছে। এই স্বীকৃতি একটি বড় পরিচয় হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন স্বপন।
আমাদের দেশের যেসব তরুণ সমাজের নানা ক্ষেত্রে কাজ করছেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যান, সময়ের সাথে সাথে আপনি আপনার স্বীকৃতি পাবেন। তবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।
ইত্তেফাক/এএএম