রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তির জন্য যাচ্ছে। যাদের অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে এবং শারীরির অবস্থা খারাপ, কেবল তারাই হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
এদিকে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। একটানা সাত দিন সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়িত হলেও কমেনি করোনা ইউনিটে রোগীর মৃত্যু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকে প্রথম পর্যায়ে গুরুত্ব না দিয়ে রোগীর অবস্থা যখন খারাপ হচ্ছে, তখন চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া শেষ সময়ে যেসব রোগীর আইসিইউ দরকার হয়, তারা সময়মতো আইসিইউ না পেয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, রামেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে একটি আইসিইউ বেডের জন্য সব সময়ই অপেক্ষায় থাকছেন প্রায় ৭০ জন রোগী। আইসিইউর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই মারা যাচ্ছেন অনেকে। সময়মতো আইসিইউ না পাওয়া মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে একটি।
রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আছে। এটি করোনার একটি মারাত্মক রূপ। এর ফলে রোগীর মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া অনেকেই আক্রান্ত হয়ে খারাপ অবস্থায়ও বাড়িতে থাকছেন। যখন তারা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছেন, তখন হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্ত রোগীরা দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ না নিলে অথবা হাসপাতালে ভর্তি না হলে মৃত্যুর হার কমানো যাবে না।’ এছাড়া কেউ করোনা পজিটিভ হলে তার রক্ত, ফুসফুসসহ বেশ কিছু পরীক্ষা জরুরি। পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা নিলে রোগী ভালো হয়ে যান।
আইসিইউর সুবিধা না পাওয়ায় রোগীর মৃত্যু বাড়ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালে আইসিইউর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যেই ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগী খারাপ হওয়ার আগেই যদি চিকিত্সকের পরামর্শ পান, তবে হয়তো তার আইসিইউর প্রয়োজনই হবে না। এর জন্য নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য যারা আসছেন, বেশি খারাপ অবস্থায় আসছেন। যার কারণে তাদের অক্সিজেন দিয়েও রিকভার করা যাচ্ছে না।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আগে আমাদের করোনা ইউনিটে ৬০ থেকে ৬৫ জন রোগী ভর্তি থাকত। তখন দুই-তিন জন মারা যেত। এখন আছে সাড়ে তিন শর মতো। মৃত্যুও আনুপাতিক হারে বাড়ছে।’ এমন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, মারা যাওয়াদের মধ্যে বড় একটি অংশ বয়স্ক।
যাদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে, তাদের হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিসের সমস্যা ও কিডনির জটিলতা ইত্যাদি রয়েছে। আর অন্য রোগে আক্রান্তরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকিটাও বেড়ে যায়। কেউ কেউ অক্সিজেন লেভেল কম থাকলেও বাসাতেই থাকছেন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণে তাদের আর বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি