শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ডাকাতির পূর্ব সংকেত ‘কাজ আছে’

আপডেট : ১৪ মে ২০১৯, ১৯:৪৩

‘কাজ আছে’ মোবাইলে এমন কথার সংকেত দিয়ে স্পট এবং সময়ের উল্লেখ করে ডাকাত সদস্যরা একত্রিত হয়ে থাকে। নৈশ পরিবহনে ডাকাতিকালে তারা বাজারের ব্যাগে মাটি আর ইটের খোয়া বহন করে থাকে। অস্ত্র বলতে শুধুমাত্র লাঠি। এমন ‘বাংলা কায়দা’য় সজ্জিত ডাকাত সদস্যদের যাত্রীরা চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা আক্রমণ করলে মৃত্যু তাদের অনিবার্য। এমন কথা বলেছেন খোদ একজন ডাকাত সদস্য।

ওই সদস্য হলেন মো. ওহিদুজ্জামান বাবু (৩২)। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার নকিপুর গ্রামের শেখ মনির উদ্দিনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তাকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হলে তিনি এভাবেই বর্ণনা করেন ডাকাতির আদ্যপ্রান্ত।

আটক ডাকাত ওহিদুজ্জামান বাবু জানান, আগে শ্যামনগরের একটি খাবারের হোটেলের কর্মচারী ছিলেন তিনি। প্রায় ৬ মাস আগে একদিন খদ্দেরবেশি এক ডাকাতের প্রলোভনে ডকাতদলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত ৫টি ডাকাতিতে অংশ নেন। এর আগে খুলনার চুকনগর সড়ক, যশোর-মণিরামপুর সড়কের কুয়াদা, রাজগঞ্জ মণিরামপুর সড়ক, কেশবপুর ও তালায় ডাকাতি করেন।

তিনি আরও জানান, দলের নেতা আবুল কাশেম, সাইফুল, হাবিবুর প্রথমে পরিকল্পনা করেন। তারপর তারা ফোনে টার্গেট এলাকার কাছাকাছি পৌঁছাতে বলেন। সন্ধ্যায় আশপাশের বাগানে অবস্থান নেন। এরপর দলের সদস্যরা একে একে জড়ো হন। এরপর টার্গেট এলাকার ঝুলেপড়া গাছের গোড়া করাত দিয়ে কেটে দড়ি বেঁধে রাখা হয়। দূর থেকে পরিবহন আসতে দেখলে ডাকাতির উদ্দেশ্যে গাছের রশি ধরে টান দেওয়া হয়। এতে রাস্তায় গাছ পড়ে টার্গেট পরিবহনের কোচটি দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। গাড়িতে উঠে লোকজনকে দা, বোমার ভয় দেখালেই সব দিয়ে দেয়।

দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) সালাউদ্দিন শিকদার। তিনি বলেন, একজন ডাকাত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ডাকাত সিন্ডিকেটের ১১ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। আটকৃতদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। পুলিশের তৎপরতায় যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মানুষের মধ্যে ডাকাতি আতঙ্কের স্বস্তি আসবে।

আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডাকে পাঁচ ডলার ঘুষ দিলো শিশু!

তিনি উল্লেখ করেন, ১৪ মে রাত পৌনে ৩টার দিকে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে সদর উপজেলার নোঙ্গরপুর মাজার সংলগ্ন এলাকায় গাছ ফেলে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে টহল পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের গাড়ির আলো দেখে তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশও আত্মরক্ষায় তিন রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় তার কাছ থেকে ম্যাগজিনসহ একটি পিস্তল, ম্যাগজিনে ৩ রাউন্ড গুলি ভরা অবস্থায়, তিনটি হাসুয়া, একজোড়া লাল রঙের বাটা স্যান্ডেল, একটি হাত করাত, ১৫ গজ নাইলনের রশি, ৬টি স্যান্ডেল ও ৫টি বাঁশের লাঠি পাওয়া যায়।

অজ্ঞাত ব্যক্তিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি আবুল কাশেম (৫১)। সে ডাকাত দলের নেতা। নিহত আবুল কাশেম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শোলাপুর গ্রামের কলিমুদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই ঘটনার পর আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১১ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

ডাকাত সিন্ডিকেটের আটক সদস্যরা হলেন-খুলনার ডুমুরিয়ার চাকুন্দিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের শওকত গাজীর ছেলে শাহিনুর (৩৫), চুকনগর দক্ষিণপাড়ার কাদের আলী গাজীর ছেলে শহিদুল গাজী (৩৫), চুকনগর গ্রামের খোকাপদ দাসের ছেলে ধনি রাম দাস (৪০), একই উপজেলার উত্তর বেতা গ্রামের মোজাহার গাজীর ছেলে আজিবর গাজী (৪৮), চাকুন্দিয়া গ্রামের আনসার আলী শেখের ছেলে বাবর আলী শেখ ওরফে বাবু (৩৬),যশোর সদর উপজেলার সিরাজসিঙ্গা গ্রামের হারুন বিশ্বাসের ছেলে আসলাম বিশ্বাস (২৯), মণিরামপুর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের আসলাম হোসেন ওরফে ইমরান (২২) ও একই গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে মিন্টু (৪০), ইত্তা মাঠপাড়া গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩১), সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার শেখ মনির উদ্দিনের ছেলে ওহিদুজ্জামান বাবু (৩২), খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সামসুদ্দিন গাজীর ছেলে মিজানুর গাজী (৩৬)।

ইত্তেফাক/জেডএইচ