শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রিফাত হত্যা

সিসিটিভি ফুটেজ ও চার্জশিটের তথ্যে মিল নেই!

আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:৪৬

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশের চার্জশিটে নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্যে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চার্জশিটে পুলিশ বলছে, ‘রিফাত শরীফ রক্তাক্ত অবস্থায় একাকী রিকশাযোগে হাসপাতালে গেলেও মিন্নি তখন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা তার ভ্যানিটি ব্যাগ ও জুতা তুলতে ব্যস্ত ছিলেন।’

অন্যদিকে বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখভাগে স্থাপিত সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ‘মিন্নিই তার স্বামী রিফাত শরীফকে রিকশাযোগে জখম অবস্থায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।’

চার্জশিটে মিন্নিকে তার স্বামীর হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত বলে দেখানো হয়েছে। এতে আরো দাবি করা হয়েছে, মিন্নির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই রিফাত অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। আরো দাবি করা হয়েছে, নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিয়ে হয়। পুলিশ এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকে উপস্থাপন করেছে।

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করে। সমপ্রতি প্রকাশিত হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এরপর মিন্নি একাই রিফাতকে রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। আদালতেও মিন্নি একই কথাই জানিয়েছেন। আদালতে দাখিলের ১৮ দিন পর বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা ৬১৪ পৃষ্ঠার চার্জশিটের ৬৪ পৃষ্ঠার সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে: বরগুনা হাসপাতাল থেকে রিফাতকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হলে মিন্নি তার জামা-কাপড় রক্তে ভেজা থাকার খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বরিশাল না গিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়।

আরো পড়ুন: খালেদ শামীম ফিরোজের উত্থান যেভাবে

রিফাত হত্যাকাণ্ডের ৬৬ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির। গত ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয় হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে। মিন্নি বর্তমানে উচ্চআদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছয় কিশোর অপরাধী শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ চার্জশিটভুক্ত আরেক কিশোর অপরাধী আরিয়ান হোসেন শ্রাবন জামিনে রয়েছেন।

১৭ আলামত আদালতে দাখিল

বরগুনা (উত্তর) প্রতিনিধি জানান, বহুল আলোচিত বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় একটি রিকশাসহ ১৮ ধরনের আলামত জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে একটি (রিকশা) ব্যতীত বাকি ১৭ ধরনের আলামত আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। এছাড়া এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৭৫ জনকে। এদের মধ্যে নিহত রিফাতের ঘনিষ্ঠ স্বজনসহ পুলিশ, চিকিত্সক এবং এলাকাবাসী রয়েছেন।

আরো পড়ুন: শেয়ারবাজারে ফোর্সড সেল, দেখার কেউ নেই

মামলায় অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে আট জনের বিরুদ্ধে মাদক, হামলা ও হত্যাচেষ্টাসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। এ আট জন হলো রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. রেজোয়ান আলী খান হূদয় ওরফে টিকটক হূদয়, মো. মুছা, মো. সাগর, মো. রাশেদুল হাসান ওরফে রিশান ফরাজী, মো. তানভীর হোসেন এবং মো. ওয়ালিউল্লাহ অলি। রিফাত হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যে আট আসামির বিরুদ্ধে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পূর্বে যে মামলাগুলো রয়েছে তার প্রায়টিরই চার্জশিট হয়েছে এবং দুই-একটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ মামলাগুলোতে আসামিদের বিচার হলে রিফাত শরীফ হত্যার মতো এমন নৃশংস ঘটনা হয়তো ঘটত না—এমন প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমি ঐ সময় বরগুনা থানায় কর্মরত ছিলাম না।

ইত্তেফাক/বিএএফ