বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফরিদপুর-৪ আসনের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৩

প্রতীক বরাদ্দের পরই শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারণা। অন্যতম বিরোধী শক্তি এবার নির্বাচনে আসায় চিরাচরিত সেই নৌকা ও ধানের শীর্ষের লড়াইই চোখে পড়ছে সর্বত্র। তবে ভিন্নচিত্র ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন-সদরপুর) আসনে। এখানে নৌকার পাশে শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দেখা মিলছে ‘সিংহ’। এই প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। অন্যদিকে নৌকায় চড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ।

ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর পুত্র মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি। তার আরো একটি বড় পরিচয় তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রী ও জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মেয়ের জামাই। দলীয় সমর্থন না থাকলেও তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। সেদিক বিবেচনায় এই আসনের লড়াই মূলত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের।

প্রতীক বরাদ্দের পর সোমবার বিকালে পৌরসদরের হুগলাকান্দি আমিনুন্নেচ্ছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেছেন, ‘গত ৫ বছর সুখে-দুঃখে আমি আপনাদের পাশে অবস্থান করেছি। আমার যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসাবে আমি এই ৫ বছরকেই ভাবি। কারণ, আমি আপনাদের ৩৫ বছরের অপশাসন থেকে মুক্তি দিতে পেরেছি। একই সঙ্গে সত্যিকার উন্নয়ন ও মূল্যায়ন ফিরিয়ে দিয়েছি। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আপনারা আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সিংহ মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন এবং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখুন। উপরে আল্লাহ এবং নিচে আমার ময়-মুরব্বীসহ ফরিদপুর-৪ আসনের জনগণই আমার একমাত্র শক্তি। আমি এই শক্তি দিয়েই নির্বাচনে বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ।’

আরো পড়ুন: ঝুলে থাকলো খালেদার নির্বাচনী ভাগ্য, হাইকোর্টের দ্বিধাবিভক্ত আদেশ

ফরিদপুর-৪ আসনটি ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন এবং সদরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৪নং আসন। এই আসনটিকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলা যেতে পারে। স্বাধীনতার পর এই আসনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী প্রার্থীরা। ১৯৭৩ সালে এই এখান থেকে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুস সালাম মিয়া। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুটি নির্বাচনে জয় পান এড. মো. মোশাররফ হোসেন। আর ২০০১ এ অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হন অ্যাড. মো. আবদুর রাজ্জাক। ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা প্রবাহের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হন কাজী জাফরুল্লাহর স্ত্রী নিলুফার জাফরুল্লাহ। এরপর ২০১৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বনি্দ্বতার সুযোগ পান কাজী জাফরুল্লাহ। ওই নির্বাচনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হন নিক্সন চৌধুরী। নির্বাচনী যুদ্ধে অভিষেকেই বাজিমাৎ করেন তিনি। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জাফরুল্লাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন।

এবার ফরিদপুর-৪ আসন থেকে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম। এই আসনে ছোট কয়েকটি দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকলেও তারা ভোটারদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। আসনটিতে কাজী জাফরুল্লাহ ও নিক্সন চৌধুরীর মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জয় পাবেন নাকি আওয়ামী পরিবারের সন্তান শেষ হাসি হাসবেন সেটাই দেখার অপেক্ষা।

ইত্তেফাক/এএম