শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গিরিধরের দুষ্প্রাপ্য ছবিশালা 

আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:০৮

২০১১ সালের কথা; সদ্য স্কুলের গণ্ডি পার হন তরুণ গিরিধর দে। একদিন ভাবনায় আসে ইন্টারনেটের এই যুগে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তথ্যের হরহামেশাই বিকৃত হচ্ছে নানাভাবে। এই বিকৃতি রোধে কিছু করা প্রয়োজন-এমন ভাবনায় গিরিধর বেছে নিলেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। পেপার কাটিং আর পুরাতন বই পুস্তক থেকে নিজের জমানো ১০ হাজার ছবি দিয়ে শুরু করলেন ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ নামের একটি অনলাইন সংগঠন। 

ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের রাজপথের দৃশ্য কিংবা গ্রাম-বাংলার মেঠো পথ বা জনপ্রিয় শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, লেখক, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দুর্লভ সব আলোকচিত্র, চিঠিপত্র, ব্যবহার্য সামগ্রী-সবই আছে তাদের সংগ্রহে। এসব আলোকচিত্র, পত্র, তথ্য ও তার নেপথ্যের ঘটনাকে নেটিজেনদের কাছে উপস্থাপন করে খুব অল্প দিনেই সাড়া ফেলেছে সংগঠনটি। শুরুতে কেবল অনলাইনে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরিসর বেড়েছে বর্তমানে এবং অনলাইনের বাইরেও চলছে নানা কার্যক্রম। ছোটবেলায় বাবার দেখাদেখি খবরের কাগজের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় গিরিধরের। পুরাতন ও দুষ্প্রাপ্য কোনো ছবি পেলেই তা সংরক্ষণ করতেন। এভাবে তিনি সংগ্রহ করেন কয়েক হাজার ছবি। 

কেবল ছবিই নয়, ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও তথ্য জোগাড় করতে থাকেন ইন্টারনেট ও ইতিহাসের বই থেকে। যেন ছবি সম্পর্কিত তথ্য বিকৃতি রোধ করা যায়। শুরুতে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ছবি ও তথ্যগুলো তুলে ধরতেন। প্রথমদিকে কিছু আপত্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলেও কয়েকদিনের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষের আস্থা অর্জন করে সংগঠনটি। তাদের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে যুক্ত হতে থাকেন দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, অভিনেতা, আলোকচিত্র শিল্পীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

তারা নিজেদের সংগ্রহে থাকা পুরাতন ও ঐতিহাসিক ছবি পাঠাতে থাকেন। এভাবে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্রের সংগ্রহশালা। বর্তমানে তাদের সংগ্রহে ছবির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। 

দৈনিক ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে গিরিধর দে বলেন, ‘দেশীয় ইতিহাস চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের মাধ্যমে একটি জ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সক্রিয় সদস্য প্রায় ১১ লাখ। আমাদের ভালোমানের কনটেন্টগুলো প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে থাকে। এজন্য তথ্য বিকৃতি রোধে ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আমরা ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবারের মাধ্যমে পুরাতন ও ঐতিহাসিক ছবিগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করি’। লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজেদের কার্যক্রমকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছে তারা।

বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র

যেমন-মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। এসব বিভাগকেন্দ্রিক ছবিগুলো আলাদা করে রাখা হয়। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবরণ্য বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নিয়মিত লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। যেখানে গল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়। অনলাইনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল, কলেজেও ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সভা, সেমিনার আয়োজন করে তারা। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে গিরিধর বলেন, ‘দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ করতে চাই। পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক মানের ই-লাইব্রেরি করতে চাই’। 

উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও তথ্য বিকৃতি রোধে অবদান রাখায় এবছর সংগঠনটি জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পদক পেয়েছে।

ইত্তেফাক/এএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন