শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খুদে তারকাদের গল্প

প্রযুক্তির ব্যাপকতায় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি যখন আসক্তি বাড়ছে শিশু-কিশোরদের; ঠিক তখনি নিজেদের প্রতিভা, ইচ্ছে শক্তি ও দক্ষতা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য শিশু-কিশোর। কেউ শেখাচ্ছে টুকিটাকি, কেউ সামাজিক সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করছে, কেউ-বা গান করছে। তাদের মধ্যে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সময়ে জনপ্রিয় ও সেরা কয়েকজন খুদে তারকা সম্পর্কে জানাচ্ছেন ফরিদ উদ্দিন রনি

আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:১৯

খুদে 'ইংরেজি শিক্ষক' মাইসুন
মাইসুন

অভিনব অঙ্গভঙ্গিতে শিশু-কিশোরদেরকে অনলাইনে সহজে ইংরেজি শেখানোর জন্য ইতোমধ্যে খুদে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে ১২ বছর বয়সী উম্মে মাইসুন। ২০২০ সালে টেন মিনিট স্কুলের ফেসবুক পেজে ‘কীভাবে ইংরেজিতে নিজেকে পরিচয় করাতে হয়’ শিরোনামে একটি ভিডিওর প্রকাশের পর সবার নজরে আসে উম্মে মাইসুন। ওই ভিডিওটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখের বেশি দেখা হয়েছে। ইউটিউব ও ফেসবুক চ্যানেলে ইংরেজি শেখানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি টিভি বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করেছে সে। সম্প্রতি ছোটদের ইংরেজি শেখার উপর ‘ছোটদের স্পোকেন ইংলিশ’ নামে একটি বইও বের করেছে। মাইসুন চট্রগ্রাম নগরির বাওরা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

 


নানা গুণের ফাতিহা
ফাতিহা

কোডিং থেকে শুরু করে বিজ্ঞান-ভুগোলের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে সহজভাবে টিউটোরিয়াল তৈরি, কোরআনের অর্থসহ তাফসীর; এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন সম্মেলনে নিয়মিত যোগ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায় নিয়ে কথা বলা ও পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার থাকার জন্য সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফাতিহা আয়াত। জাতিসংঘ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে অসংখ্য বক্তব্য। ১৬তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলন, ইউএন ডে এবং উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাজেন্ডাতে শিশুদের অধিকার নিয়ে রেখেছে বক্তব্য। ফাতিহা চায় বড় হয়ে এমন কিছু করে বিশ্বসভ্যতায় অবদান রাখতে, যেন একটি শিশুও ক্ষুধাকাতর দিন না কাটায়। শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও কাজ করছে সে। বহুমাত্রিক মেধার জন্য অল্পবয়সেই ফাতিহা অর্জন করেছে অসংখ্য পুরস্কার। এ পর্যন্ত ফাতিহার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। 

 


সুরের পাখি জাইমা
জাইমা

জাইমা নূরের জন্ম রাজশাহী বিভাগের চাপাইনওয়াবগঞ্জে। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০১৫ সালে রমজান মাসে বৈশাখী টিভির সংগীত প্রতিযোগিতা ‘লক্ষ প্রাণের সুর’-এ ইসলামী নাশীদ গাওয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় জাইমা’র। সুললিত কণ্ঠ, বিমোহিত সুরে প্রতিটি গানই অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গত ছয় বছরে বিভিন্ন টেলিভিশনে রমজানে সংগীতানুষ্ঠান থেকে শুরু বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে গেয়েছে অসংখ্য গান। গতবছর রমজান মাসে বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনে আয়োজিত কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে ‘বাবা’ গান গেয়ে ব্যাপক পরিচিতি পায় জাইমা। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এই গানটি প্রায় সাড়ে ১১ কোটি বার দেখা হয়েছে। জাইমা মূলত ইসলামী নাশীদ ও দেশাত্মবোধক গান গেয়ে থাকে। একটি সংগীত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানে হাতেখড়ি হয় তার। এখন পড়াশোনা করছে পঞ্চম শ্রেণিতে। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু গান— রহমের বৃষ্টি, পর্দা, আমার একটা মন ছিল, মাছরাঙা, খাদিজার মতো জীবন গড়ো ইত্যাদি। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা বিকাশে ভবিষ্যতে কাজ করে যেতে চান জাইমা।

 


খুদে অধ্যাপক সুবর্ণ বারী
সুবর্ণ

সুবর্ণর বয়স যখন দেড়বছর, তখনি গণিতের জটিল সব সূত্রাবলী মুখস্ত বলতে দেখে সুবর্ণ-র বাবা গণিত আর বিজ্ঞানের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে তাকে উৎসাহ দিতে থাকেন। একসময় মাত্র ২ বছর বয়সে রসায়নবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ পার্ট পর্যায় সারণি মুখস্থ করে ফেলে সুবর্ণ। কিন্তু তখনো কারোর বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তাই তার এমন বিস্ময়কর প্রতিভা যাচাইয়ের জন্য একের পর এক পরিক্ষা নেওয়া হয়। ওয়াশিংটন ডিসির ফোবানায় কয়েক হাজার মানুষের সামনে এমআইটির অধ্যাপক ও নাসার বিজ্ঞানী ড. মিজান চৌধুরী পরিক্ষা নেন সুবর্ণ-র। তখন ক্যালকুলেটরের সাহায্য ছাড়াই গণিতের সব প্রশ্নের সমাধান করে দক্ষতার পরিচয় দেয় সে। তাঁর এমন অসাধারণ প্রতিভার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষসহ অনেকে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি আন্তজার্তিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকার নিয়েছে সুবর্ণ-র। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ক্লাসও নিয়েছে সে।

 


শিশুসাংবাদিক ও সমাজকর্মী সিজদা
সিজদা

করোনার বিস্তাররোধে নিজে সুস্থ থাকতে এবং আশপাশের মানুষকে সুস্থ রাখতে বিভিন্ন কলাকৌশল আর অঙ্গভঙ্গিতে স্বাস্থ্য সচেতনামূলক ভিডিও তৈরির জন্য সুবহা সাফায়েত সিজদা সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সিজদা সবেমাত্র লর্ডস ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ক্লাশ থ্রি’র পাঠ চুকিয়ে ফোর-এ প্রবেশ করেছে। কিন্তু এরমধ্যেই তার প্রতিভা, ইচ্ছাশক্তি আর দক্ষতায়—সবার মন জয় করে নিয়েছে। কথা বলার ধরনে মনে হবে না সে ছোট্ট শিশু। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সচেতনতা তৈরিতে অবদান রাখার জন্য পেয়েছে সম্মাননা। এছাড়া জাতিসংঘের ইউনিসেফ-এ কাজ করছে স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা, খেলাধুলাতে ব্যস্ত সময় কাটায় সিজদা। বড় হয়ে বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার, তাদের নিরাপদ বাসস্থান ও শিক্ষার জন্য কাজ করতে চায় সিজদা।

 


ঋতুরাজের গানের ভুবন
ঋতুরাজ

খুদে গায়ক ঋতুরাজ ভৌমিক হূদ্য। অবশ্য সবাই তাকে চিনে 'বাপকা-বেটা’র 'বেটা' হিসেবে। ঋতুরাজ-এর বয়স যখন পাঁচের কোঠায়, পুরোপুরিভাবে কথা বলতে শিখেনি, তখনি বাবার পাশে বসে জনপ্রিয় সব গান একটু করে মুখস্থ করে ফেলেছিল। গানের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা শুভাশিস গানের তালিম দিতে লাগল। কিছুদিন পর বাবা-ছেলে একসাথে গান গেয়ে ভিডিও আপলোড করলে দ্রুত তা ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপর ৬ বছর বয়স থেকে নিয়মিত বাবার সাথে গান শুরু করে ঋতুরাজ। পরে তার বাবা ‘বাপকা-বেটা’ নামে একটি ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। তাদের গানগুলো অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পায়, আর এসব গানের মাধ্যমেই সবার প্রশংসায় ভাসছে খুদে শিল্পী ঋতুরাজ। অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির এই ছাত্র পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিদিন রুটিন করে কোডিং নিয়ে কাজ ও ছবি এঁকে সময় পার করে। বড় হয়ে সেনাকর্মকর্তা হতে চায় সে।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন