বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মানসুরা

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ২১:১৫

সারি সারি দর্শকের সামনে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাপেটটি যেন কোনো এক জাদুর ছোঁয়ায় কথা বলে চলেছে অনর্গল। কারো চোখে রাজ্যের বিস্ময়, আবার কারো মুখে একরাশ মুগ্ধতা। এ-ও কি সম্ভব? হ্যাঁ, বলছিলাম বিশেষ এক ধরনের কলা’র কথা, যার নাম ভেন্ট্রিলোকুইজম। বিশ্বব্যাপী ভেন্ট্রিলোকুইজমের চর্চা বেশ পুরানো। তবে আমাদের দেশে এর জনপ্রিয়তা খুব বেশি দিনের নয়। ভেন্ট্রিলোকুইজম নামটা একটু খটমটে শোনালেও এর বেশ মিষ্টি একটা বাংলা অর্থ রয়েছে। বাংলা ভাষায় একে বলা হয় মায়াস্বর। আর বাংলাদেশের মেয়ে মানসুরা মুবাশ্বিরা সেই মায়াস্বরের চর্চাই যেন করে যাচ্ছেন নিপুণ দক্ষতায়।

মানসুরা বর্তমানে পড়াশোনা করছেন শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। মানসুরা নিজের কণ্ঠকে এমন দক্ষতার সাথেই ব্যবহার করেন যেন তা সত্যি সত্যিই মনে হবে কথাগুলো পুতুলের গলা থেকে বেরিয়ে আসছে। ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে মানসুরার আগ্রহের শুরুটা কয়েক বছর আগে। তখন তিনি কেবল স্কুলে পড়েন। আস্তে আস্তে তার আগ্রহ তৈরি হয় পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। নিজের বাসায় থাকা পুতুলকে কেটে পাপেট বানিয়ে একা একাই অনুশীলন করতেন তিনি। অবশ্য মুখ বন্ধ করে কথা বলার কৌশল আয়ত্ত করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যায় তার। সে সময় একটি সরকারি কাজে মানসুরার বাবা দেশের বাইরে যান। মেয়ের আবদার রক্ষা করতেই তিনি নিয়ে আসেন ভেন্ট্রিলোকুইজমের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা পুতুল। এরপর থেকে মানসুরা নতুন উদ্যমে শুরু করেন তার অনুশীলন।

ভেন্ট্রিলোকুইজমের জগতে মানসুরার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমেরিকার ডার্সি লিন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে মানসুরার তৈরি করা ভিডিওগুলো। ভিডিওগুলোতে বেশিরভাগ সময় মানসুরা ও তার পাপেট চরিত্র গ্র্যানিকে দেখা যায়। গ্র্যানি চরিত্রটি বেশ বয়স্ক হলেও সে খুব মজার মানুষ। তবে মানসুরা শুরু করেছিলেন ইউটিউবের মাধ্যমে। করোনাকালে লকডাউনের সময়টায় মানসুরা ঘরে বসেই পুরোদমে চালিয়ে যান ভেন্ট্রিলোকুইজমের চর্চা। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করতে থাকেন মজাদার সব গল্পের স্ক্রিপ্ট। আর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দিতে থাকেন নতুন নতুন ভিডিও। মানসুরার জনপ্রিয়তা শুরু মূলত একটি টেলিভিশন রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে। ২০২০ সালে ‘অনন্য প্রতিভা’ নামক একটি মাল্টি ট্যালেন্ট হান্ট শো তাকে তার প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ করে দেয়। এনটিভি আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন হন মানসুরা। সেই থেকে মানসুরা আর তার চরিত্র গ্র্যানি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়।

মানসুরা মুবাশ্বিরা

সব বয়সের দর্শকদের কাছেই সমানভাবে জনপ্রিয় মানসুরা। বিশেষত স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস বেশ উপভোগ করেন মানসুরা। তিনি বিনোদনের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতামূলক বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে চান শিশু-কিশোরদের মাঝে। ভেন্ট্রিলোকুইজমের বাইরেও মানসুরার রয়েছে নানান শখ। নাচ, গান এবং ছবি আঁকায়ও বেশ পারদর্শী তিনি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে এবং তা চর্চা করতে ভালোবাসেন। নিজের পছন্দের কাজগুলোর মাঝে ডুবে থাকাতেই নিখাঁদ আনন্দ খুঁজে পান মানসুরা। শিক্ষার্থী হিসেবেও বেশ মেধাবী তিনি। মাধ্যমিকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। এখন পুরোদমে চলছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্ত্ততি। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মানসুরা ভবিষ্যতে ‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ নিয়ে পড়াশোনা করতে চান। শিশু-কিশোরদের জন্য একজন সত্যিকারের অনুপ্রেরণা মানসুরা মুবাশ্বিরা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের শখের কাজের মাধ্যমে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন সকলকে। তিনি বলেন, ‘অনেক বাবা-মা মনে করেন পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু করলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। তবে পড়াশোনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পাশাপাশি নিজেকে সৃজনশীল বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত রাখা উচিত।

 

ইত্তেফাক/এসটিএম