প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল ডায়াবেটিস প্রতিরোধী গুণসম্পন্ন ‘এইচআরএম চা’ উদ্ভাবন করেছেন। নামে এইচআরএম চা হলেও এর উৎপাদনপ্রণালীতে চা-পাতা ব্যতীত পাঁচটি গোপন ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যা স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবংউচ্চমাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসিবিএস সেন্টারে চার দিনব্যাপী আয়োজিত ১৫তম ‘ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম অন ন্যাচারাল প্রোডাক্ট কেমিস্ট্রি’ শীর্ষক সম্মেলনে এই চা উদ্ভাবনে করা গবেষণাকর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে ওআইসি’র মিনিস্টেরিয়াল স্ট্যান্ডিং কমিটি অন সায়েন্টফিক অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল কো-অপারেশন (কমসটেক)।
সম্মেলনে ড. হাফিজকে সম্মাননা সনদ প্রদান করেন কমসটেক কো-অর্ডিনেটর জেনারেল এবং পাকিস্তানের জাতীয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করে বারডেমে রিসার্চ-ফেলো এবং সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে থাকাকালেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারেন অধ্যাপক হাফিজ। উপমহাদেশে—বিশেষ করে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা উপলব্ধি করে তখনই এটি নিয়ে বিশদ গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীকালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাগ-ডিসকভারি, মলিকিউলার বায়োলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর অধ্যাপনাকালে ডায়াবেটিস নিয়ে আরও উচ্চতর গবেষণার সুযোগ পান।
অধ্যাপক হাফিজের মতে, ‘রোগ-নিরাময়ক ওষুধ সমূহ সার্বজনীনভাবে তৈরি করা হলেও দেশ-কাল-পরিবেশভেদে রোগের ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। যে কারণে একই ওষুধ সকল রোগীর ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর হয় না। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও তাই। এটি মূলত লাইফস্টাইল ডিজিস। বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু চা প্রেমী, তাই এই জনপ্রিয় পানীয়-তে এমন কী কী উপাদান থাকলে তা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে এটি জানতেই মূলত এই গবেষণাকার্যের সূত্রপাত।’
২০২০ সালের শেষদিকে চারজনের সমন্বয়ে গড়া গবেষক দল ১১টি ভেষজ উপাদানের সংমিশ্রণে এই টি-ব্যাগ প্রস্তুত করেন। পরবর্তী সময়ে যাপর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৭টি এবং পরিশেষে সবচেয়ে উপযুক্ত-বাছাইকৃত ৫টি চূড়ান্ত উপাদান নির্বাচন করা হয়। গবেষণাকর্মটির দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সে করা হবে। সেখানে পার পেলেই বিএসটিআই’র অনুমোদন সাপেক্ষে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো হবে।