শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দেশের সর্বাধুনিক শিক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে শিখো’র পথচলা

আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১৮:৫৪

কদিন আগেও ঘরে বসে সন্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার কথা চিন্তা করাই একরকম স্বপ্ন বলে মনে করতেন অভিভাবকরা। প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও রাজধানীর বাইরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার একই রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাটাও ছিল কঠিন। তবে সময় বদলেছে। দেরিতে হলেও প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের যেকোনো প্রান্তে থেকেই শিক্ষার্থীরা এখন আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করার পেছনে যারা দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান 'শিখো'। বাংলাদেশভিত্তিক শিক্ষাপ্রযুক্তি (এডটেক) স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহীর চৌধুরী (সিইও) এবং জিশান জাকারিয়ার (সিওও) হাত ধরে।

প্রতিষ্ঠানের কো-ফাউন্ডার অ্যান্ড সিওও জিশান জাকারিয়ার জন্ম বাংলাদেশে। বাবা আর্মিতে কর্মরত থাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল মিলিয়ে শেষ করেছেন শিক্ষাজীবনের প্রথমাংশ। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। সেখানেই টিচার্স ট্রেইনিং-এর ওপর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে যুক্তরাজ্য, ব্রুনাই ও বাংলাদেশে প্রায় একযুগ ধরে শিক্ষকতা করেন জিশান।

তিনি বলেন, আমার সবসময় দেশে ফেরার আর সেই সঙ্গে শিক্ষাখাতে কিছু করার ইচ্ছা ছিল। দেশে শিক্ষকতার চাকরির পাশাপাশি তাই অবসর সময়ে টিচার্স ট্রেইনিং-এর ওপর কাজ করতাম। এমন সময় শাহীর চৌধুরী আমার কাছে শিক্ষাখাতে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানান। এড্যুকেশনাল কনটেন্ট বানানোর জন্য ওনার একজন পার্টনার দরকার ছিল। আমি যেহেতু ট্রেইন্ড আর আমার ক্যারিয়ার ছিল এদিকে, তাই আমিও জয়েন করি।

তিনি আরও বলেন, শিখো আমার কাছে একটা মাধ্যম যার সাহায্যে আমি একটা স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করছি। আর আমার স্বপ্ন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া।  

২০১৯ সালের এপ্রিলে শাহীর চৌধুরী ও জিশান জাকারিয়ার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে 'শিখো'। পরিকল্পনা ছিল শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের সিলেবাস ও পাঠদান নিয়ে কাজ করার। একদম শুরুতে নিজেদের কর্মক্ষমতার মধ্যেই কাজ শুরু করেন দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এ সময় সাধারণ গণিত নিয়ে ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট কোর্স বানায় শিখো। চাকরির পাশাপাশি এ সময়টাতে শিখোর জন্য কনটেন্ট নিয়ে কাজ করতেন তারা। প্রায় একই সময়ে দুই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে যুক্ত হন হাবিব ও সুদীপ্ত নামে আরও দুই জন।

জিশান জাকারিয়া বলেন, আমরা পুরোপুরি স্কুলভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি। শিখো বাচ্চাদের স্কুল ব্যবস্থার রিপ্লেস না। বরং স্কুল পরবর্তী শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে শিখো। আমরা অ্যানিমেশনের মাধ্যমে বিষয়গুলোকে যতটা সহজ করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করছি, স্কুলে সে সুযোগটা একেবারে নেই বললেই চলে।

শুরুতে ১৫ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের জন্য কন্টেন্ট বানাতো শিখো। আমরা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস নেই। শিক্ষার্থীদের যে বিষয়গুলো পরে পরীক্ষা দেওয়া লাগে সেগুলো নিয়েই অ্যানিমেতেড ভিডিও কন্টেন্ট বানাই। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করি আমরা। প্রতিটি ভিডিও শেষে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্র্যাকটিস টেস্ট, পরীক্ষায় আসতে পারে এমন সমস্যা, এগুলোর সমাধান আর নোট দিয়ে দিচ্ছি আমরা। এরপরও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য বিষয়ভিত্তিক আলাদা শিক্ষক, ক্লাস এবং কনিসালটেশনের ব্যবস্থা রেখেছি আমরা।

শিখো প্রতিষ্ঠার পর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা প্রথমেই কারিকুলাম ডিজাইন করি। আমরা গবেষণা করি, আসলে কিভাবে কন্টেন্ট বানালে শিক্ষক না থাকলেও শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে সেগুলো শিখতে পারে। সেই গবেষণা থেকেই প্রতিটি কন্টেন্টের দৈর্ঘ্য, কিভাবে উপস্থাপন করা হবে সেটা নির্ধারণ করি।

অন্যদিকে বাংলাদেশের অভিভাবকদের চিন্তার বিষয় ছিল, কীভাবে অনলাইনে পড়াশোনা করা সম্ভব তা নিয়ে। তবে এ বিষয়ে কোভিড আমাদের সাহায্য করেছে। পুরো একটা শিক্ষাবর্ষ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে শেষ করেছে। সারাদেশ মিলিয়ে আমরা প্রায় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া। আর এর ৫০ শতাংশই ঢাকার বাইরের।

প্রথম দুইজন, এরপর চারজন আর তারপর সাত জনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা শিখোতে এখন কাজ করছেন একশ জনেরও বেশি সদস্য। শিখোর সঙ্গে এখন রয়েছেন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ভিডিও টিম, সাউন্ড টিম, এডিটররা। বিশাল এই শিখো-বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা।

তিন বছরে শিখো এগিয়েছে বহুদূর। দেশে অ্যানিমেটেড এডুকেশনাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে শিখো। সব ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য অ্যানিমেটেড কন্টেন্টই শিখোকে আলাদা করে অন্যদের থেকে। সে কারণেই শিখোর লক্ষ্য, আগামী সময়ে সব বয়সের সবাই তাদের শিখোর ভিজ্যুইয়াল কন্টেন্ট থেকে সুবিধা পাবে।

নতুন উদ্যোগ থেকে সফল প্রতিষ্ঠানে রূপ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে জিশান জানান, প্রতিটা উদ্যোগের শুরুতে গবেষণা খুবই জরুরি। এরপর চিন্তা করা উচিত কী করবেন আর তা করার জন্য আপনার আসলে কাকে বা কোন ক্যারিয়ারের মানুষের সাহায্য দরকার।

আর যেকোনো উদ্যোগের শুরু থেকে সাফল্যের পথ পাড়ি দিতে  সবার সবথেকে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য্য, বার বার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের। এগুলো বাদ দিয়ে কোনোভাবেই উদ্যোগকে সফল উদ্যোগে রূপ দেওয়া সহজ হবে না।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি