শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে তাদের অনুভূতি

এমন এক সময় ছিল, যখন রক্তের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতো মানুষ। এখন ব্যাপক সংখ্যক রক্তদাতা তৈরি হচ্ছে। রাত-বিরাতে তারা ছুটে যান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার ডাকে সাড়া দিতে। ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে রক্তদানের অনুভূতির কথা বলেছেন এমনই কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা। গ্রন্থনা করেছেন জহিরুল কাইউম ফিরোজ

আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১৯:৪৪

রক্তদাতা হিসেবে পরিচয় দিতে খুব গর্ববোধ করি। রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অকল্পনীয়। কোনো আত্মীয়তা না থাকলেও রক্তদানের মাধ্যমে গড়ে ওঠে মানবিক সম্পর্ক। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানুষ হয়ে ওঠে মানুষের আপনজন। এ সম্পর্কে থাকে না আর্থিক চাহিদা, থাকে না একে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা। শুধু থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা। এভাবে প্রত্যেকে একে অন্যের বিপদে যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই তাহলে পৃথিবীতেই স্বর্গসুখ পাওয়া সম্ভব। রক্ত দিয়ে যেমন আমরা স্বাধীনতা এনেছি, তেমনি রক্তদানের মাধ্যমে আমরা সে স্বাধীনতার মহান উদ্দেশ্যকে সফল করবো। সবার উচিত নিজ শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে নিয়মিত রক্তদান করা।
সজীব ভৌমিক, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ।


রক্তদান এমন একটি বিষয় যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। এটি একটি অনুভূতি। আমার এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে যদি নতুন একটি প্রাণের আবির্ভাব হয়, যদি কেউ জীবন ফিরে পায়, এরচেয়ে বেশি প্রশান্তি আর কী হতে পারে! প্রথম যেবার রক্ত দেই এক আপুকে, সেবার কিছুটা ভয় কাজ করছিল। রক্ত দেওয়ার পর তার কৃতজ্ঞতার প্রকাশ আমাকে মুগ্ধ করে। রক্তদানের মাধ্যমে মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাছাড়া রক্তদানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, যেটি একটি ইবাদত। প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রয়েছে। স্রষ্টাকে খুশি রাখতে সৃষ্টির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার অন্যতম উপায় হলো রক্তদান করা।
ইকবাল মাহমুদ, প্রবাসী, সৌদি আরব।


কিছু অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রক্তদানের অনুভূতিও তেমনই। এতটুকু বলতে পারি এটি আমার কাছে পৃথিবীর সেরা অনুভূতিগুলোর একটি। আল্লাহ তা'লা মানুষকে বানিয়েছেন অন্যের কল্যাণের জন্য। সবসময় চেষ্টা করি যেন আমার দ্বারা অন্য কারও উপকার হয়। আর তা যদি হয় রক্তদান করে, তাহলে ভালো লাগার পরিমাণ আকাশসম হয়। আপনি আজ মানুষের পাশে থাকেন, আল্লাহ তায়ালা আপনার বিপদে কাল অন্য কাউকে ঠিক পাঠিয়ে দিবেন। রক্ত দিলে শরীর ভালো থাকে। তাই সকলের উদ্দেশ্যে বলব, নিজে রক্ত দিন। অন্যকে উৎসাহিত করুন। আপনার দেওয়া এক ব্যাগ রক্ত হাসি ফোটাবে গোটা একটি পরিবারে।
রিয়াদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, সার্ভিস ফর হিউম্যান বিয়িং অরগানাইজেশন।


রক্তদাতা হওয়ার অনুভূতি দারুণ। প্রতিবার রক্ত দিয়ে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার সুস্থ হয়ে রক্ত দেওয়ার জন্য পাগল হই। যখন রক্ত দিতে যাই মাথায় খেলা করে, আমার রক্তে একটা প্রাণ সুস্থ হবে, এই পাগলামিটা আমার ভালো লাগে। বেঁচে থাকার জন্য নিয়মতান্ত্রিকতার পাশাপাশি কিছু পাগলামির প্রয়োজন আছে। আপনার ভালোবাসায় একটা প্রাণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে আল্লাহর ইচ্ছায়। অনেকে রক্ত দিয়ে অসুস্থ হওয়ার ভয় পায়। রক্ত দিয়ে কেউ অতটাও অসুস্থ হয় না যতটা লোকে বলে। এটা কাটিয়ে ওঠা যায়, যাবেও। তাই সবার উচিত রক্তদান করা। এতে মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি শারীরিকভাবে ফিট আছে কি-না তা অবগত হওয়া যায়।
লামিয়া তারাবি, নির্বাহী কর্মকর্তা, আরোগ্য।


মানব জীবন রক্ষার অন্যতম স্লোগান হলো, জীবন মোদের রক্তে গড়া, রক্তে গড়া প্রাণ; রক্ত দিয়ে বাঁচাবো মোরা শত তাজা প্রাণ। এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমাজ বিনির্মাণের সবচেয়ে সুন্দরতম উপায় হচ্ছে রক্তদান করা। প্রথমত, রক্তদানের মাধ্যমে সমাজ রক্ষায় অবদান রাখতে পারছি। আবার শরীরে রক্ত সম্পর্কিত নানান রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারছি। রক্তদান একপ্রকার আশীর্বাদস্বরূপ। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নতুন রক্ত তৈরি হয়। তাই আমি নিয়মিত রক্ত দান করি। রক্তদাতা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব হয়। এতে সৃষ্টির যেমন সেবা করা হচ্ছে, তেমনি অর্জন হচ্ছে স্রষ্টার নৈকট্য।
রাফি মাহমুদ, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।


যখন কাছের কারও বিপদে রক্তের প্রয়োজন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু সঠিক সময়ে রক্ত সংগ্রহ করতে না পারায় জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে হয়, তখনকার অনুভূতি আপনার ভেতরটাকে সেখানেই এক দফা মেরে ফেলে। নিজেকে সেই জায়গায় রেখে চিন্তা করি বলে আজ রক্তদাতা হয়েছি। খালি চোখে দেখা যায় রক্তদান করে শুধু একজনের জীবন বাঁচালাম। আসলে এতটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। এর পরিধি আরও বিস্তৃত। আমার রক্তে একটা প্রাণ আমার পৃথিবী দাঁপাবে, এমন তৃপ্তি টাকা দিয়েও কেনা অসম্ভব। তাছাড়া রক্তদাতারা নানা বদঅভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে রাখে। দেশ ও দশের কল্যাণে তারুণ্যের সুস্থ থাকা খুব জরুরী।
সানজানা আজাদ স্মরণী, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন