বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

কোরবানি ও ত্যাগের অনুপম শিক্ষা

আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ১১:৪৫

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ঈদুল আজহা। সেদিন যেসব কার্যাবলি সম্পন্ন করা ওয়াজিব হিসাবে গণ্য তার মধ্যে প্রধান হলো কোরবানি। কিন্তু কোরবানি দেওয়ার পরও আমরা কত জন ত্যাগের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হই। বর্তমানে সারা বিশ্বে সংকট চলছে। করোনা ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ক্ষতিগ্রস্ত কমবেশি সবাই। বাংলাদেশের অনেক মানুষ কষ্টে আছেন। তাই এই সময় ওয়াজিব একটি কোরবানি দেওয়ার পর আমরা বন্যার্ত ও অসহায় মানুষদের সাহাঘ্যে দান-খয়রাতের ওপর গুরুত্ব দিতে পারি। বাজারে মাংসের দাম এখন চড়া বিধায় কোরবানির মাংস আমরা যেন শরিয়ত অনুযায়ী যথাযথভাবে বিলিবণ্টন করতে পারি, যাতে কেউ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।

কোরবানি আল্লাহর নবি হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় নিষ্ঠা ও অপূর্ব ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। কোরবানি দ্বারা মুসলিম মিল্লাত ঘোষণা করে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা জানমাল সবকিছু কোরবানি করতে প্রস্তুত। কোরবানির নজিরবিহীন ত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করে মুসলমানগণ আল্লাহর দরবারে শপথ করেন যে, হে আল্লাহ! আমাদের জান-মাল, জীবন-মৃত্যু তোমারই জন্য উৎসর্গিত। তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমরা যেভাবে পশু কোরবানি করছি, তেমনিভাবে আমাদের জীবন উত্সর্গ করতেও কুণ্ঠিত হব না।

কোরবানি করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে। তবে দম্ভ-অহংকার বা গর্বের মনোভাব নিয়ে নয়। আল্লাহ তায়ালা সুরা হজ্জের ৩৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট সেগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া।’

মানুষের মধ্যে যেমন মনুষ্যত্ব আছে, তেমনি পশুত্বও আছে। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরবানির মাধ্যমে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে তোলা। এভাবে কোরবানির প্রকৃত তাত্পর্য হলো, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্ত্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উত্সর্গ করা। আল্লাহ তায়ালা সুরা কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ প্রকৃতপক্ষে কোরবানিদাতা কেবল পশুর গলায় ছুরি চালায় না বরং সে তো ছুরি চালায় সকল প্রবৃত্তির গলায় আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে; এটিই কোরবানির মূল নিয়ামক। এ অনুভূতি ব্যতিরেকে কোরবানি করা হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর সুন্নত পালন নয়, বরং এটা একটি প্রচলিত প্রথা মেনে চলা মাত্র। এতে গোশতের ছড়াছড়ি হয় বটে কিন্তু ঐ তাকওয়া হাসিল হয় না; যা কোরবানির প্রাণশক্তি। একইভাবে কোরবানি আমাদের বিপদে-আপদে ধৈর্যেরও শিক্ষা দেয়।

লেখক: কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

 
unib