বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

ঈদে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়ায় গণভোগান্তি

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৫

ঈদের মৌসুম যতই ঘনিয়ে আসছে, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগও ঠিক ততই বাড়ছে। ছুটির সময় ভাড়া বৃদ্ধির এই পুনরাবৃত্তিমূলক ঘটনাটি প্রায়শই যাত্রীদের, বিশেষত যারা পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে উদ্যাপন করার জন্য দূরদূরান্তে যাতায়াত করেন তাদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। ঈদ ঘিরে পরিবহনের চাহিদা বৃদ্ধি অনস্বীকার্য, কারণ সারা দেশে লাখ লাখ মানুষ আত্মীয়দের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে, ধর্মীয় উত্সবে অংশ নিতে এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অংশ নিতে যাত্রা শুরু করে। এ কারণে পরিবহন সরবরাহকারীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং মসৃণ পরিচালনা নিশ্চিত করতে ভাড়া বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু আকাশচুম্বী ভাড়া বৃদ্ধি কম আয়ের ব্যক্তি ও শ্রমিকদের বাজেভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যা বছরের ইতিমধ্যে ব্যয়বহুল সময়ে আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এই ভাড়া বৃদ্ধি যাত্রীদের হতাশা আরো বাড়িয়ে তোলে। অনেকে হঠাত্ করে এই ভাড়া বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যে, ছুটিতে এমন ভাড়া বৃদ্ধি কি পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষিত, নাকি ছুটির ভিড়কে পুঁজি করার জন্য কেবল সুবিধাবাদী অন্য কোনো ব্যবস্থা দ্বারা চালিত হচ্ছে। এ সম্পর্কে পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো উত্তর মেলেনি। যার ফলে যাত্রীরা অস্বস্তি বোধ করছেন।

এই সমস্যা সমাধানে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যাত্রীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। পরিবহন পরিষেবার বর্ধিত চাহিদা মেটানো এবং সমস্ত ভ্রমণকারীর জন্য তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে নির্বিশেষে সাশ্রয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

যাত্রীদের ওপর আর্থিক চাপ কমানোর একটি সম্ভাব্য কৌশল হলো দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে ভাড়ার সীমা বা মূল্যসীমা বাস্তবায়ন করা। কত ভাড়া বাড়তে পারে তার সীমা নির্ধারণ করার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। এর পাশাপাশি পরিবহন কর্তৃপক্ষের উচিত, শিক্ষার্থী ও প্রবীণ নাগরিকদের মতো নির্দিষ্ট জনসংখ্যার জন্য বিশেষ ভাড়া নির্ধারণ করা। এই লক্ষ্যযুক্ত উদ্যোগগুলো শিক্ষার্থী ও প্রবীণদের ওপর আর্থিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। 

আর ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারি মহলের উচিত আরো বেশি সচেতন হওয়া এবং কঠোর বিধিনিষেধ তৈরি করা। যদিও বাংলাদেশে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে ৩৪ ধারার ৪ উপধারাতে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই ধারা অমান্য করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। যদিও এই শাস্তি অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো এই আইনের প্রয়োগ একেবারেই অপ্রতুল। এছাড়াও সাধারণ মানুষ এই আইন সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে অসাধু পরিবহন মালিকদের বেশি টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না। তাই এই আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো দরকার এবং এর প্রতিকার গড়ে তোলা দরকার।

মানুষ হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, এসব ছুটির সময় সব ভ্রমণকারীদের জন্য পরিবহন যেন সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী হয়, তা নিশ্চিত করা। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যাতে একটি মানুষও ঈদ আনন্দ, উদ্যাপনে অংশ নেওয়া থেকে বাদ না যায় সেদিকে লক্ষ রাখা। শুধু একটু চিন্তাশীল ও ন্যায়সংগত নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারে যে ঈদ সমাজের সব সদস্যের জন্য।

লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন